Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিঙ্গাপুরে আসার আগে যা ভেবেছি, এখন কী দেখছি


দু’জন পথচারী লুঙ্গি পরে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন। তাদের দেখে এক পুলিশ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা এই পোশাক পরে কোথায় যাও? পথচারীরা হাসতে হাসতে জবাব দিলেন একটু হাঁটতে বের হয়েছি স্যার।

এই পোশাক পরে কেন? তোমাদের কি প্যান্ট, ট্রাউজার নেই? আছে স্যার, আমরা ইন্ডিয়াতে লুঙ্গি পরেই ঘোরাঘুরি করি। পুলিশ হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এটা ইন্ডিয়া না, সিঙ্গাপুর। একটু স্মার্ট হয়ে চলাফেরা করতে হবে’।

পুলিশের কথা শুনে আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। সিঙ্গাপুরে আসার আগে আমার এক বন্ধু বিমানবন্দরে বলেছিলেন লুঙ্গি পরে বাইরে যাওয়া নিষেধ। লুঙ্গি পরে বের হলে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাবে। তুই এসব পরে কোথাও যাবি না। সবসময় প্যান্ট পরে বের হবি। তার কথা শুনে ভয় পেয়েছিলাম। আমি তো লুঙ্গিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

সিঙ্গাপুর আসার পর এক বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাই লুঙ্গি পরে বের হলে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়? ভাই অবাক হয়ে বলেছিলেন, তুমি জানলে কেমনে? আমি দুই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বিজ্ঞ হবার ভান করে বললাম, আমি সব জানি।

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ গতকাল লুঙ্গি পরার অপরাধে দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। সাবধান তুমি কিন্তু ভুলেও লুঙ্গি পরে রাস্তায় বের হইও না’।

তার কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠেছিল। এ কেমন দেশ! লুঙ্গি পরে রাস্তায় বের হলে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় পোশাক। এমন কোনো ব্যক্তি নেই যে পরে না। লুঙ্গির মতো আরামদায়ক পোশাক পৃথিবীতে আর নেই।

লুঙ্গি পরলে পুলিশ গ্রেফতার করে কিনা, তা প্রত্যক্ষ করার জন্য একদিন সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হয়েছিলাম। চারপাশে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম কিছু লোক লুঙ্গি পরেই রাস্তার পাশে বসে মদপান করছে। আবার কিছু পথচারী সেলাইবিহীন সাদা ধুতি পরে হেঁটে যাচ্ছে। আর বার্মিজরা লুঙ্গির নিচে জামা গুজে পান চিবাতে চিবাতে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের পাশ দিয়েই পুলিশ যাচ্ছে অথচ কাউকে কিছু বলছে না।

বাসায় ফিরে বড় ভাইকে বললাম, ‘আপনি আমার সঙ্গে মজা করেছিলেন’? ‘কেন’! ‘এই যে বলেছিলেন লুঙ্গি পরে রাস্তায় বের হওয়া নিষেধ অথচ আমি নিজের চোখে দেখে এলাম অনেকেই লুঙ্গি পরে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশ কিছুই বলছে না’।

আমার কথা শুনে বড় ভাই হাসি থামাতে পারলেন না। হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ তোমার সঙ্গে মজা নিয়েছিলাম। তোমাকে এই ফালতু কথা কে বলেছে লুঙ্গি পরে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ লুঙ্গি পরে রাস্তায় বের না হওয়াই ভালো। রাস্তায় বের হবে একটু স্মার্ট হয়ে’। ভাইয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়েছিলাম। আমি এতটা বোকা হলাম কি করে!

আসার আগে বন্ধু, পরিচিতজনেরা বলতেন সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। সাবধানে থাকবেন। রুমের বাইরে একজোড়া মেয়েদের জুতা রাখবে। নইলে তারা রুমে প্রবেশ করবে, তখন আর দেশে টাকা পাঠাতে পারবে না। রুমের বাইরে মেয়েদের জুতা দেখলে অন্যমেয়ে ভাববে হয়তোবা আরেকটা মেয়ে ঘরের ভেতরে আছে।

তাদের কথা শুনে এক ধরনের রোমাঞ্চবোধ করতাম। বিদেশি মেয়ে রুমে প্রবেশ করবে ভাবতেই শিহরিত হতাম। মনেপ্রাণে চাইতাম আমার রুমে বিদেশি মেয়ে প্রবেশ করুক।

কিন্তু সিঙ্গাপুর আসার পর আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল। কি ভেবেছিলাম আর কি দেখছি। মধ্যরাতে আমাদের এক ডরমেটরিতে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হলো। আমি উঁকিঝুঁকি দিয়ে চারপাশে নারী খুঁজতে লাগলাম। কোথাও কোনো মেয়ে দেখলাম না। আমি হতাশ হলাম। তবুও আশায় থাকলাম যদি দিনে সুন্দরীদের দেখা পাই।

পরদিন দেখতে পেলাম প্রত্যেকটা রুমেই পুরুষ থাকে। শুধু ডরমেটরিতেই না, আশপাশে কোথাও মেয়ে দেখতে পেলাম না। যারা আমাকে মিথ্য স্বপ্ন দেখিয়েছিল তাদের কথা মনে মনে ভাবছি। একদিন এক বন্ধুকে কল দিয়ে বিস্তারিত বলার পর সে আমার কথা শুনে হাসতে লাগল।

তবে যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি কিছুই পেয়েছি এই বিদেশ বিভুঁইয়ে। আশপাশে উন্মুক্ত মদের দোকান। যার ইচ্ছে সে প্রকাশ্যে বসে মদ পান করছে। ইচ্ছে হলে ক্যাসিনো গিয়ে জুয়া খেলছে। ফোর ডিজিট নম্বর, টুটু, খেলা নিয়ে বাজি খেলছে। পরিবার ছেড়ে অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে কেউ কেউ কুপথেও পা বাড়ায়।

এক ইন্ডিয়ান সহকর্মীকে সেদিন রাস্তায় মাতাল দেখে এগিয়ে গেলাম। তাকে লক্ষ্য করে বললাম, এই যে মদপান করে রাস্তায় পড়ে থাক তাতে লাভ কি? তোমার পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও এসব বাদ দাও।

সে বলল, ‘ওমর ভাই ইদানিং নিজেকে নিয়ে খুব ভাবি। কে আমি? আমি কি করতে সিঙ্গাপুর এসেছি। আমার পরিবারের প্রতি আমার দায়িত্ব কি। এসব চিন্তা করলে কিছুই ভালো লাগে না’।

সে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। ‘মদ, জুয়া, নারী সবকিছু হাতের কাছে পেয়েও আজকাল জীবনটা একঘেঁয়েমি মনে হয়। আসলে জীবনের উদ্দেশ্যে কি! বুঝতে পারি না। ফুর্তি করা, জুয়া খেলা, মদপান করে মাতাল হওয়া জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। সিঙ্গাপুরে এলাম, খেলাম আর শূন্য হাতে দেশে ফিরে গেলাম। এটাই জীবনের উদ্দেশ্য হবে তাহলে পশু আর আমার মধ্যে পার্থক্য রইল কোথায়’?

তার মুখে এমন কথা শুনে চুপ করে রইলাম। নেশাগ্রস্ত মানুষের মনের দরজা খুলে গেল মনে হয়। তাই আমি এমন মানুষ দেখলে এগিয়ে যাই। এখন সে নেশাগ্রস্ত, এখন যা বলবে সকালে তা ভুলে যাবে। তবুও তার মুখে ঝরানো কথা ভালো লাগছে।

তাই আমিও সুযোগ পেয়ে তাকে উপদেশ দিলাম, শোনেন ভাই ভোগ; বিলাসিতাই জীবনের সব নয়। তুমি যদি এখানে ভোগ বিলাস করে সব উড়িয়ে দিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে যাও তাহলে তুমিও তো পশুর মতো হয়ে গেলে। আমরা কেউই পশু হয়ে মরতে চাই না। আশাকরি তুমি বুঝেছ। সে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ বুঝেছি তোমাকে ধন্যবাদ’।

তবে সিঙ্গাপুর আসার আগে ভেবেছিলাম, প্রবাসে আসা মানেই অল্প কয়দিনে বাড়ি-গাড়ি করে দেশে ফিরে যাব। কিন্তু দিন যায় আর আমার হতাশা বাড়ে। এখন উপলব্ধি করছি এই পরবাস জীবন থেকে সহজে আমার মুক্তি মিলবে না। একের পর এক সমস্যা সমাধান করতে করতেই হয়তোবা একদিন আমি শেষ হয়ে যাব।
-জাগোনিউজ২৪.কম

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.