Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ত্রানের জন্য হাহাকার! বানভাসীদের পাশে দাড়ানোর আহবান







ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার খড়িও। নলকুপ তলিয়ে থাকায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এ চিত্র এখন কুড়িগ্রামের ৪ শতাধিক চরাঞ্চলসহ জেলার ৫৬ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক পরিবারের। এসব পরিবারের প্রায় সোয়া ৬ লাখ মানুষ তাদের গবাদি পশুসহ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছেন। এদের বেশির ভাগ মানুষই বন্যার থৈ থৈ পানির মাঝে বাড়িতে নৌকায় ও ঘরের ভিতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে দিন-রাত যাপন করছেন। শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছেন পানির মাঝে বসবাসকারী পরিবারগুলো।



আর যারা ঘর-বাড়ী ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। কোথাও কোথাও বন্যা দুর্গতদের আশ্রিত স্থানেও হানা দিয়েছে বন্যার পানি। আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলি কোন রকমে জীবন বাঁচানোর তাগিদে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

অনেক পরিবার শুকনো খড়ির অভাবে রান্নার কাজ করতে না পারায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন দোকান থেকে কেনা শুকনো খাবারের উপর। কিন্তু নগদ টাকার অভাবে অনেক পরিবারের ভাগ্যে জুটছে না দোকান থেকে কেনা সে খাবার টুকুও। সেই সাথে শত শত মানুষ একসাথে বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে ধাপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাবু টাঙ্গিয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও গবাদি পশু নিয়ে বসবাস করলেও অনেক পরিবার পলিথিন বা ত্রিপালের অভাবে রয়েছেন খোলা আকাশের নীচে।



নলকুপের অভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন তারা। পাশাপাশি টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলাই উন্মুক্ত স্থানে সাড়তে হচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক কাজ। বিশেষ করে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে নারীরা।

বন্যা দুর্গত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেক পরিবারের ঘরে রান্নার চাল থাকলেও শুকনো খড়ি ও চুলার অভাবে রান্না করতে পারছেন না। চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকার কারনে দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা কর্মহীন দিন পার করছে। হাতে কাজ না থাকায় ও ঘরের সঞ্চিত খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় এ মানুষগুলি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ত্রাণ সহায়তার উপর। এ অবস্থায় একবেলা আধবেলা খেয়েই দিন পার করছেন অনেক পরিবার।



এদিকে সরকারী হিসাব মতেই জেলায় প্রায় সোয়া ৬ লাখ মানুষ বন্যা দুর্গত হয়ে শুকনো খাবারের সংকট নিয়ে বসবাস করলে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য মাত্র ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যা চাহিদারতুলনায় প্রায় অপ্রতুল।

রৌমারী উপজেলার চর বন্দবের ইউনিয়নের বন্দবের গ্রামের সাধু শেখের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪৫) জানান, বন্যায় খুব দুর্ভোগে আছি। রান্না করার উপায় নাই। ঘরে শুকনো খাবারও নাই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাঁচার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের ৪৭ হাজার মানুষই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এদের বেশির ভাগ মানুুষ ইউনিয়ন পরিষদসহ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাকী পরিবারগুলোও আশ্রয়ের জন্য উঁচু জায়গা খুঁজছে। এসব বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য সরকারী ভাবে এ পর্যন্ত ১১০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৯ মেট্রিক টন টাল বরাদ্দ পেয়েছি যা বিতরণ চলছে।



রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপঙ্কর রায় জানান, আমার উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা পানিবন্দিদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকেই যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যার পানির চাপে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ছিড়ে ও সড়ক-মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তা ঢুকে পড়ছে উঁচু এলাকার গ্রামও হাটবাজারগুলোতে।



সরকারী তথ্য মতেই জেলার ৯ উপজেলার ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৯৮টি গ্রামের সোয়া ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আর এসব পানিবন্দি মানুষের জন্য বৃধবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫০০ মেট্রিক টন টাল ও ৯ লাখ টাকা।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষেরা শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে খেয়ে না খেয়ে অবর্ণনীয় দিন পার করছে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা কবলিত পরিবারগুলো শুকনো খড়ি ও চুলার অভাবে রান্না করতে পারছেন না। এজন্য ৯ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার কিনে দেয়া হচ্ছে। নতুন করে ৪ লাখ ৮৮ হাজার পরিবাকে দেয়ার জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা দ্রুত বিতরণ করা হবে। এছাড়াও আজ বুধবার নতুন করে ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে। বরাদ্দ পেলে সাথে সাথেই বিতরণ করা হবে।

জেলার সচেতন মহল সমাজের হৃদয়বান বৃত্তানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের বন্যার সব খবর জানতে ও জানাতে যোগাযোগ করতে পারেন ফয়সাল শামীম- ০১৭১৩২০০০৯১

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.