Beanibazarview24.com
তিউনিসিয়ায় আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের ডাক দিয়ে যাওয়া সাংবাদিকের শরীরের আগুন যেন উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় বিপ্লবের ডাক দিয়ে গেছেন তিনি। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিউনিসিয়ার রাস্তায় আবারও ঢল নেমেছে মানুষের।
২০১০ সালে তিউনিসিয়ারই এক সবজি বিক্রেতা নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আরব বসন্তের সূচনা করেছিলেন। আত্মাহুতির সেই আগুন থেকে সূচনা হয়েছিল জাগরণের। কেঁপে উঠেছিল আরব দেশগুলোর স্বৈরশাসকদের মসনদ। তিউনিসিয়ায় সেই ‘আরব বসন্ত’র প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় এবার নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করলেন সেখানকার একজন সাংবাদিক। মৃত্যুর আগে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে একে ‘অস্তিত্বের প্রশ্নে বিপ্লবের সূচনা’ বলে গেছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তার আহ্বানে রাস্তায় নেমেছে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক। তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ছয়জন পুলিশ আহত হয়েছেন, গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জনকে। কাসারিনের পশ্চিমাঞ্চলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বেনিয়ানের পূর্বাঞ্চলে সংঘর্ষে এক পুলিশ আহত হন।
আটক করা হয় পাঁচজনকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, একজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতারের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা রাস্তা বন্ধ করে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিশেম ফুরাতি বলেন, এখন পর্যন্ত ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোয় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরব বসন্তকালীন আন্দোলনে পতন হয় দেশটির দীর্ঘসময় শাসন করা স্বৈরশাসক জাইন আল আবেদিন বেন আলির। বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরবের অন্যান্য দেশগুলোতে। এরপর দেশটিতে গণতন্ত্র শুরু হলেও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
অর্থনৈতিক অবস্থা ও কর্মসংস্থানের অভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে জনগণ। তিউনিশিয়ান ফোরাম ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটসের প্রেসিডেন্ট মেসাউদ বলেন, সেখানে রাজনীতিবিদ ও তরুণদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশেষ করে যারা অনিরাপত্তায় ভোগে, নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে যারা নিশ্চিত নন তারা।
সেই পরিস্থিতির প্রতিবাদেই তিউনিশিয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ চলছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, রাজধানী তিউনিসে বুরগিবা অ্যাভিনিউয়েও জড়ো হয়েছে অনেক মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে তারা। ক্যারাসিনের আইন বিভাগের মুখপাত্র আসরেফ ইউসেফি বলন, ‘বিপদে থাকা একজন ব্যক্তিতে সহায়তা করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। জোরগুইয়ের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আরব বসন্তের আট বছর উপলক্ষে তিউনিশিয়ার সাংবাদিকদের জাতীয় জোট ১৪ জানুয়ারি সাধারণ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
তিউনিশিয়ার সংবাদপত্র লে কোতিদিয়েনে জানায়, জোরগুইর এই আত্মত্যাগ মূলত দুর্যোগময় পরিস্থিতি, বৈষম্য ও কমংসংস্থানের প্রকট অভাবের প্রতিফলন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি সৃষ্টিতে যে দেশের নেতারাই দায়ী সেই বিষয়টি কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তরুণ প্রজন্ম খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.