Connect with us

আন্তর্জাতিক

কানাডার অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন, বিপদে অস্থায়ী অনুমতি পাওয়া অভিবাসীরা

কানাডার অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন, বিপদে অস্থায়ী অনুমতি পাওয়া অভিবাসীরা

টরন্টোর পিয়ারসন বিমানবন্দর থেকে শহরে গেলে একজন উবারচালক ভালোই আয় করতে পারেন। কিন্তু ১৯ সেপ্টেম্বর মিজান আলী’র ভাগ্যটাই খারাপ ছিল। কয়েক মাইল যাওয়ার পরই তাঁর উবার অ্যাপ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

ওই দিন মধ্যরাতেই মিজান আলী’র কাজের অনুমতি শেষ হয়ে যায়। কানাডার কর্তৃপক্ষ যেমন তাঁকে নোটিশ দিয়েছিল, উবারও তেমনি তাঁকে নোটিশ দিয়ে দেয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ২৩ বছর বয়স্ক মিজান আলী কানাডায় এসেছিলেন শিক্ষার্থী ভিসায়। এখন তাঁর বয়স ২৩। যে ভিসায় তিনি এসেছিলেন, তার আওতায় তিনি কাজ খোঁজার সুযোগ পেয়েছেন। কাজ পেলে স্থায়ীভাবে থাকারও সুযোগ আছে। ‘পড়াশোনা-কাজ-বসবাস’ নামে এ অভিবাসনসুবিধা পরিচিত।

কিন্তু অর্থনীতি চাঙা করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাখ লাখ মানুষকে কানাডায় স্বাগত জানিয়ে সরকার এখন নতুন পথে হাঁটতে চাইছে। দেশটিতে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, এই অভিবাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে আবাসন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে নতুন অভিবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার সংস্থান রাখতে হচ্ছে।

কানাডায় অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি–সংক্রান্ত যে বিশাল কর্মসূচি রয়েছে, চলতি বছর তাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে মিজান এর মতো হাজারো অভিবাসী আইনি ঝামেলায় পড়ে গেছে।

কানাডায় স্থায়ী হওয়ার একটি পথ ছিল শিক্ষার্থী হিসেবে এসে গ্র্যাজুয়েশনের পর কাজ খুঁজে নেওয়া। অন্য একটি পথ হলো চাকরি নিয়ে দেশটিতে আসা। এই দুই পথেই সবচেয়ে বেশি অভিবাসী কানাডায় এসেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁরা স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। আর সর্বশেষ পথটি হলো আশ্রয়প্রার্থী হয়ে দেশটিতে থাকা।

করোনাভাইরাস মহামারির পর কানাডায় শ্রমিকসংকটের কারণে দেশটির কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার অনুমতি দেয়। দেশটিতে যে ৩০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো ধরনের অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি আছে, তাদের ২২ লাখই এসেছেন গত দুই বছরে। কানাডার জনসংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ। এর ৬ দশমিক ৮ শতাংশই অস্থায়ী বসবাসকারী, যে হার ২০২২ সালে ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

কানাডায় এখনো যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশটিতে বেকারত্বের হার ৬ শতাংশ। এ হার কমাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। আর অস্থায়ী ভিত্তিতে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার আরও বেশি—১৪ শতাংশ। বেশির ভাগ শহরে আবাসনের সংকট রয়েছে। আর স্বাস্থ্যসুবিধাও অনেক প্রদেশে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

সমালোচকেরা বলছেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাসকারীরা পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছেন। অভিবাসনের প্রতি জনমতও দিনে দিনে তেতো হচ্ছে।

এর ফলাফল হিসেবে অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার চলতি বছরের শুরুতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর একটি হলো, শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা কমিয়ে আনা। আরেকটি পদক্ষেপ হলো, একটি কোম্পানি সর্বোচ্চ কতজন অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া। এসব পদক্ষেপের মূল লক্ষ্যই হলো অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনা।

সরকারি এসব পদক্ষেপের ফলে যেসব অস্থায়ী শ্রমিকের কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে বা শেষ হতে চলেছে, তাঁদের সেই অনুমতির নবায়ন না–ও হতে পারে। এরাই সবাই মিজান এর মতো অস্থায়ীভাবে কানাডায় বাস করছেন।

অভিবাসনে বিধিনিষেধ আরোপ করে আগামী মাসে সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করবে বলে কথা রয়েছে।

কানাডার প্রতি ৫ জন বাসিন্দার ১ জন বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশ অনেক দিন ধরেই বিদেশি অভিবাসীদের জন্য কানাডার দরজা খোলা। শ্রমের সংকট কাটিয়ে ওঠা ও জনসংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশটি অভিবাসনকে উৎসাহিত করেছে। তবে পরিস্থিতি এখন পাল্টাচ্ছে।

জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কানাডিয়ান মনে করেন, সরকার খুব অল্প দিনের মধ্যে খুব বেশিসংখ্যক অভিবাসীকে সে দেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। আগস্টে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ কানাডিয়ানই মনে করেন যে সরকার বর্তমান অভিবাসন নীতিমালার কারণেই বিপুলসংখ্যক মানুষ কানাডায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন।

অনেক অভিবাসী অবশ্য মনে করেন, তাঁদের অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, তাঁদের কানাডায় ডেকে আনা হয়েছে, কিন্তু কাজের অনুমতির নবায়ন না হলে তাঁদের চলে যেতে হবে—এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

কানাডায় অভিবাসন নিয়ে এখন যা চলছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অভিবাসনের চিত্র তুলে ধরছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কমলা হ্যারিসও তাঁর পার্টির আগের অবস্থানের চেয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। ইউরোপের অনেক দেশে অভিবাসনবিরোধী কট্টর রাজনৈতিক দল, এমনকি বর্ণবাদী দলের উত্থান হচ্ছে।

কানাডায় অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন, দেশটিতে আবাসন ও স্বাস্থ্য সুবিধার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য অভিবাসীদের দায়ী না করে বরং এই দুই খাতে সরকারের স্বল্প বিনিয়োগের দিকে নজর ফেরানো দরকার।

পড়াশোনা-কাজ
কানাডার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরও বেশি নমনীয় নীতি নিতে চায়। এর মানে হলো, যখন শ্রমিক দরকার হবে, তখন অভিবাসী আসার সুযোগ দেওয়া হবে। দেশটির কর্মসংস্থানমন্ত্রী র‍্যান্ডি বয়সোনল্ট বলেন, ‘এটা অনেকটা অ্যাকর্ডিয়নের মতো কাজ করবে। যখন অনেক বেশি কর্ম খালি থাকবে, তখন আমরা বেশি করে মানুষ আনব। আর অর্থনীতির অবস্থা ভালো না থাকলে লোক আসা কঠিন হবে।’

কিন্তু মিজান এর মতো বিভিন্ন দেশের নাগরিক কাজের অনুমতি হারিয়ে এখন বেশ বিপদে রয়েছেন। তিনি ও তাঁর পরিবার ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন অফিস ব্যবস্থাপনা ও অতিথিসেবা বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। ভেবেছিলেন, এই ডিগ্রি তাঁকে কানাডায় একটি ভালো অবস্থান গড়তে সাহায্য করবে। কিন্তু এখন তাঁকে অন্য বিকল্পের কথা ভাবতে হচ্ছে।

মিজান আবার কলেজে ফিরে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। কিছু মানুষ বেআইনিভাবে বাস করছেন, আর ক্লিনার বা রেস্তোরাঁয় কাজ করে খুব অল্প বেতন নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়েন। অনেকে যোগ্য না হলেও আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ১৩ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল এর অর্ধেক। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ঘটনা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বলে দেখা গেছে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

কলকাতায় হাহাকার, বাংলাদেশিদের অভাবে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা

কলকাতায় হাহাকার, বাংলাদেশিদের অভাবে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা

কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা, যেখানে এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত; কিন্তু সেটা এখন এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে।

এই এলাকার ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের অনুপস্থিতিতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয়, অনেক ব্যবসায়ী বলতে বাধ্য হচ্ছেন—‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়।’

প্রসঙ্গত, কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট, হগ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড এবং কেওয়াইডি স্ট্রিটের মতো এলাকার ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোতে এখন কোনো প্রাণ নেই। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, শপ—সব কিছুই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, আর ব্যবসায়ীরা তাদের বিক্রি পুরোপুরি শূন্য হয়ে যাওয়ায় ঋণে ডুবে যাচ্ছেন।

এই এলাকায় গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছিল একটি বিশেষ ব্যবস্থা—বাংলাদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং সেবা—যা এখন একেবারে মরে যাচ্ছে।

দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, আমরা একেবারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছি। বাংলাদেশি পর্যটকরা না এলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। তাদের উপস্থিতি ছিল আমাদের ব্যবসার একমাত্র জীবিত প্রাণ। এখন তারা আসছেন না, আর আমরা ভীষণ আর্থিক সংকটে পড়েছি।

বাংলাদেশি পর্যটকদের নির্ভর করে গড়ে ওঠা হোটেল মালিক পিন্টু বসাক বলেন, দুই দশক ধরে এই এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য সব কিছু সাজিয়ে রেখেছি—হোটেল রুম, খাবারের রেস্টুরেন্ট, দর্শনীয় স্থান—সব কিছু। কিন্তু এখন তারা আর আসছেন না। আমাদের হোটেল রুম ভাড়া ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে গেছে এবং আমরা আর্থিকভাবে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।

আবেগতাড়িত হয়ে মার্কুইস স্ট্রিটের রেস্টুরেন্ট মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, এটি শুধু একটি ব্যবসা ছিল না, এটি দুই দেশের সম্পর্কের একটি প্রতীক ছিল। আজ যখন বাংলাদেশি পর্যটকরা আর আসছেন না, তখন আমাদের মনে হচ্ছে, এই সম্পর্কের প্রতীকও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা যতটুকু চেষ্টা করছি, ততটুকু ভাঙনের হাত থেকে এই এলাকায় বাঁচানো যাচ্ছে না।

কলকাতার ব্যবসায়ীরা এক ভয়াবহ অবস্থা মুখোমুখি হয়েছেন। হোটেল রুম ভাড়া কমে গেছে, দোকান-পাটে ক্রেতা নেই, রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি খাবারের অর্ডার নেই—যে ব্যবসা এক সময় ছিল লাভজনক, তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। তাদের আর্থিক সঙ্কট এতটা গভীর হয়ে উঠেছে যে, অনেকের পক্ষে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) একটি জরুরি বৈঠক করেছেন, যেখানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

অনুষ্ঠানে তাদের একমাত্র লক্ষ্য—বাংলাদেশি পর্যটকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা, যাতে তারা কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়।

তবে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কা এখনো কাটেনি। তারা জানেন না, এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এবং তাদের টিকে থাকার জন্য কত দিন লড়াই করতে হবে। কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা এখন এক কঠিন সময় পার করছে এবং যদি অবস্থা দ্রুত না বদলায়, তাহলে অনেক ব্যবসায়ী হয়তো তাদের জীবিকা হারিয়ে ফেলবেন।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

দুবাইয়ের ভিসা বাতিল হচ্ছে ভারতীয়দের

দুবাইয়ের ভিসা বাতিল হচ্ছে ভারতীয়দের

হোটেল বুক করে, বিমানের টিকিট কেটেও দুবাই যাওয়া বাতিল করতে হচ্ছে ভারতীয়দের।

সংযুক্ত আবর আমিরাত প্রশাসন পর্যটক ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি করায় সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেক ভারতীয়ের ভিসাও পর পর বাতিল হচ্ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগে দুবাইয়ের ভিসা আবেদনের ৯৯ শতাংশই অনুমোদিত হত। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সব নথি দেওয়ার পরেও ভিসার আবেদন প্রত্যাখান হচ্ছে বলেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

সংযুক্ত আবর আমিরাত সরকার সম্প্রতি দুবাইয়ের পর্যটকদের ভিসার জন্য নতুন এবং কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, পর্যটকদের তাদের হোটেল বুকিংয়ের বিবরণ এবং ফেরার বিমান টিকিট দাখিল করতে হবে ভিসা আবেদনের সময়।

শুধু তাই নয়, যদি কেউ দুবাইয়ে কোনো আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কারো কাছে উঠে, সে ক্ষেত্রে ওই লোকের যাবতীয় তথ্য জমা করতে হবে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে এক থেকে দুই শতাংশ ভিসার আবেদন বাতিল হত। কিন্তু বর্তমানে ভিসা বাতিলের সংখ্যা বেড়েছে। এখন প্রতিদিন পর্যটকদের ১০০টি আবেদনের মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’টি ভিসা বাতিল হচ্ছে।

এক পর্যটন সংস্থার কর্মকর্তা নিখিল কুমার বলেন, নিশ্চিত বিমান টিকিট এবং হোটেলে বুকিং থাকা সত্ত্বেও ভিসার আবেদন বাতিল হয়ে যাচ্ছে।এর ফলে অনেকেই আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ পর্যটকদের শুধু ভিসা আবেদনের ফি নয়, বিমান টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের জন্যও টাকা দিতে হচ্ছে।

আমিরাত প্রশাসনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শুধু বিমানের টিকিট এবং হোটেল বুকিংয়ের বিবরণ দিলেই হবে না। ভ্রমণকারীদের প্রমাণ করতে হবে দুবাইয়ে থাকার জন্য তাদের কাছে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে। যদি হোটেলে থাকতে চান, তবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নূন্যতম ৫০ হাজার টাকা থাকতে হবে। আবেদনকারীকে ভিসার আবেদনপত্রের সঙ্গে শেষ তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং প্যান কার্ডের প্রতিলিপি জমা করতে হবে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

হাসিনার মতো বিমানের সংকেত অদৃশ্য করে পালিয়েছেন আসাদ

হাসিনার মতো বিমানের সংকেত অদৃশ্য করে পালিয়েছেন আসাদ

রাজধানী দামেস্ক দখলে নেওয়ার বিদ্রোহীদের ঘোষণার মুখে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আসাদ সিরিয়া ছাড়ার পর সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দামেস্ক বিমানবন্দর এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করে সরে যায়।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিমানের সংকেত গোপন করে ভারতে পালিয়ে যান, বাশার আল আসাদও সংকেত অদৃশ্য করে দেশ ছেড়েছেন।

বিদ্রোহীরা দামেস্ক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে ওপেন সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকাররা সিরিয়ার আকাশসীমায় একটি বিমান উড্ডয়নের রেকর্ড করে।

এতে দেখা যায়, ইলিউশিন ৭৬ বিমানটির ফ্লাইট নম্বর সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮। দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়ে যাওয়া শেষ ফ্লাইট ছিল এটি। ওই ব্যক্তিগত উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি সেনারা সরে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, দামেস্ক থেকে ছেড়ে যাওয়া শেষ ফ্লাইটে অবস্থান করছিলেন আসাদ। তবে তার গন্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকারদের দাবি, এটি পূর্বদিকে উড়েছিল। তারপরে এটি উত্তরে ঘুরছিল। কয়েক মিনিট পরে, এটি হোমস শহর প্রদক্ষিণ করার সঙ্গে সঙ্গে এর সংকেত অদৃশ্য হয়ে যায়।

গত ৫ আগস্ট তীব্র প্রাণঘাতি গনআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দেখে গণভবন থেকে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় হাবিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে পালান হাসিনা। হাসিনার পলায়নের পরপরই গণভবণ দখল নেয় লাখো বিক্ষু ছাত্র-জনতা।

হাসিনার ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের না জানাতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ওই সময়। একটি উড়োজাহাজের অবস্থান, নাম, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানাতে থাকে ট্রান্সপন্ডার। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি প্রবেশের আগে এর ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি।

হাসিনার নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিতের পর গণভবন ছেড়েছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ঠিক একইভাবে আসাদ উড়োজাহাজে চেপে বসার পর বিমানবন্দর ছেড়ে যায় সরকারি বাহিনী।

৫ আগস্ট কারফিউ চলাকালীন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সেনাবাহিনী। ঠিক একইভাবে সিরিয়ার জেনারেলরা আসাদের সাথে কথা না বলেই হোমস থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। আরব দেশ ও পশ্চিমাশক্তির সঙ্গে কথা বলে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসিনার মতো বিমানের সংকেত অদৃশ্য করে পালিয়েছেন আসাদ
সিরিয়ান সংবাদসংস্থা সাউত আল আসিমার সূত্র বলছে, আরব দেশগুলো গত দুই দিন আসাদকে পদত্যাগের আহ্বান জানালেও উপস্থাপিত সব উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান হয়। আসাদ একটি দীর্ঘ ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করা হবে।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক ব্যবহারকারী এমন খবরে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জালিয়াতি করে নির্বাচন করার পর, অবশেষে তিনি (আসাদ) বৈধ নির্বাচন করতে চান?

গুনি ইয়াজার নামে আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, আসাদের একগুয়েমি ব্যক্তিত্ব দুঃখ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনেনি। এটা কোনো নেতৃত্ব নয়; তার অহংকার বন্যপশুর হয়ে গেছে, তাকে বুঝতে হবে তার পতন ঘটতে যাচ্ছে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের জের ধরে সিরিয়ার বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে তা রুপ নেয় গৃহযুদ্ধে। রাশিয়া আর ইরানের সমর্থনপুষ্ট বাশার আল আসাদ নিজের ক্ষমতা অনেকটা সংহত করে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত আক্রমণ হাতে গত সপ্তাহ থেকে। নতুন লড়াইয়ে একের পর এক বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় সরকারি বাহিনী।

রোববার বিদ্রোহী দলগুলো টেলিগ্রাম বার্তায় জানায়, ‘বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়নের পরে, এবং ১৩ বছরের অপরাধ ও অত্যাচার এবং (জোর করে) বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর… আমরা আজ এই অন্ধকার সময়ের অবসান এবং সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।’

১৯৭০ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ছিলেন আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা। হাফিজ শক্ত হাতে তিন দশকের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেন। তিনি সিরিয়াকে ক্রমেই মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিতে থাকেন।

নিজের গোত্র আলাওয়াতিদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন। গোটা দেশে নিজের ধ্যান ধারণা আর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা প্রচার করার পাশাপাশি নিজের ক্ষমতাও অনেক বাড়িয়ে নেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর ওই বছরই মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ক্ষমতা গ্রহণ করেন তার কনিষ্ঠ ছেলে বাশার আল-আসাদ। বাশার প্রায় দু যুগ ধরে স্বৈরাাচারি কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন। টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছে।

৫ আগস্ট, আওয়ামী সরকারের পতনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে আন্দােলনরত ছাত্র-জনতা। ঠিক একইভাবে বাশার আল-আসাদের প্রয়াত পিতা ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের একটি মূর্তি ভেঙে ফেলেছে বিক্ষোভকারী জনতা। দামেস্কের শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে জারমানা এলাকার একটি বড় মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে ফেলার ছবিও ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া হোমস শহর থেকে হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া যাওয়া হয়।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়িতে হাহাকার, থমকে গেছে জীবিকা

বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়িতে হাহাকার, থমকে গেছে জীবিকা

বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের শিলিগুড়িতে ব্যবসায়ীদের মাঝে হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাসিন্দাদের জীবিকায় দেখা দিয়েছে চরম সংকট। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেককে কিছুদিনের মধ্যে পথে নামতে হবে বলে জানিয়েছে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা। সংকটের সমাধানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই বাংলাদেশিদের অভাবে শিলিগুড়ির অর্থনীতিতে দেখা দেওয়া সংকট নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ইস্যুতে এবার শিলিগুড়ির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় শিলিগুড়ির ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

এএনআই বলছে, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি একটি পর্যটন গন্তব্য হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং পরিচিত। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য সব রাজ্যকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে শহরটি। শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রও শিলিগুড়ি। পশ্চিমবঙ্গে শিলিগুড়ির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এই শিলিগুড়ির মাধ্যমে তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানে সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিংয়ে যান বহু বাংলাদেশি পর্যটক। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পর ভিসা ইস্যুর জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে শিলিগুড়ির হোটেল শিল্পে।

সেখানকার বেশির ভাগ নামিদামি হোটেল ফাঁকা। অনেক বাংলাদেশি বুকিং বাতিল করছেন। শিলিগুড়ি-ঢাকা রেগুলার বাস সার্ভিস পরিচালনাকারী বাস অপারেটরগুলোও গত সাত দিনে একজনও যাত্রী পায়নি। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা।

শিলিগুড়ির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক এএনআইকে বলেছেন, ‘‘শিলিগুড়ি সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুও এই শহর। পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় পর্যটকরা শিলিগুড়িতে ভিড় করেন।

শহরটির অপর হোটেল ব্যবসায়ী বিপিন কুমার গুপ্তা এএনআইকে বলেন, ‘‘প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের যে কোনও ইস্যু ভারতকেও জর্জরিত করে। বাংলাদেশিরা ভারতে আসা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাতিল করায় শিলিগুড়ির শিক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হোটেল ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।’’

তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী দেশ। আশপাশে যে সমস্যা, অশান্তি বা অন্য কিছু দেখা দেবে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে আপনার এখানে। তাই আমাদের শিলিগুড়ি শহরে বেশি প্রভাব পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ এর বেদনা ও অভিজ্ঞতা আমরা সরাসরি অনুভব করতে পারি। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের জীবিকার ওপর।’’

বিপিন কুমার বলেন, ‘‘গত আগস্ট মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। আমি সরকারের কথা বলব না। কিন্তু খারাপ রাজনৈতিক পরিবেশ আমাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে। কারণ সেখান থেকে নতুন ভিসা আপডেট করা হচ্ছে না। কাউকেই নতুন ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশিরা দার্জিলিং, শিলিগুড়ি বা কালিম্পংয়ে পড়াশোনা, কেনাকাটা অথবা কেবল ঘুরে বেড়ানোর জন্য আসেন। কয়েকটি বাংলাদেশি পর্যটক গ্রুপ, যারা ছয় মাস আগে হোটেলে রুম বুক করেছিলেন, তারাও তাদের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।’’

শিলিগুড়ির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক বিকাশ দাস বলেন, তারা সকলেই চান দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক; যাতে বাংলাদেশ থেকে আগের মতো অতিথিরা এখানে আসেন।’’

ইন্দো-বাংলাদেশ বাস অপারেটর শিবপ্রসাদ ঘোষ এএনআইকে বলেন, ‘‘আগে ঢাকা থেকে পর্যটকে পূর্ণ থাকতো বাস। কিন্তু এবার আমরা একজন যাত্রীও পাইনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি পরিবহনের কাজ করি। আমরা শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের ঢাকা পর্যন্ত যাই। আমরা এখন কাজ করতে পারছি না। তারা যদি ভিসা না দেয়, তাহলে মানুষ এখানে আসবে কীভাবে? বাসগুলো এখন কাজ করছে না, লোকসান গুনছে। আমরা চাই এই সমস্যা সমাধানে দুই দেশ একযোগে কাজ করুক। তারা সংলাপ ও কূটনীতিতে ফিরে এলে সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।’’

সূত্র: এএনআই।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ভারতীয় উগ্রবাদীদের হামলা

আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, নামানো হলো পতাকা

ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ ভারতের বিভিন্ন ডানপন্থি সংগঠনের কয়েকশ সদস্য এই হামলা চালায়। এসময় সহকারী হাইকমিশনের ভবনে টাঙানো বাংলাদেশের পতাকা টেনে নামিয়ে ফেলে তারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আসাম ট্রিবিউন জানিয়েছে, এদিন আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করে একদল বিক্ষোভকারী। বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ করছিল তারা।

এসময় নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে শতাধিক বিক্ষোভকারী। একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশের পতাকা টেনে নামিয়ে ফেলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল উগ্র বিক্ষোভকারী সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।

যদিও একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আসাম ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, অফিস কম্পাউন্ডের ভেতরে কোনো ভাঙচুর বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির আগেই পুলিশ সব বিক্ষোভকারীকে তাড়িয়ে দেয়।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, বিক্ষোভকারীরা সহকারী হাইকমিশনে বাংলাদেশের পতাকা টেনে নামিয়ে ফেলেছে।

এ ঘটনায় স্থাপনার ভেতরে কোনো সম্পত্তির ক্ষতি বা কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়ে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, কোনো অবস্থায়ই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তির ওপর হামলা হওয়া উচিত নয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তিকে যে কোনো অবস্থায়ই আঘাতের বাইরে রাখা উচিত।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন ও দেশটির অন্য সহকারী হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

মসজিদের স্থানে মন্দির ছিল দাবি, ভারতে পুলিশের গুলিতে তিন মুসল্লি নিহত

মসজিদের স্থানে মন্দির ছিল দাবি, ভারতে পুলিশের গুলিতে তিন মুসল্লি নিহত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের একটি মসজিদকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির দাবি, প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির ভেঙেই এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল, ওই ভবনের স্থাপত্যে নাকি এখনও তার প্রমাণ রয়েছে। প্রাচীন ওই মসজিদে ‘সার্ভে’ বা সমীক্ষা চালানোর নির্দেশকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে অন্তত তিনজন মুসলিম নিহত হয়েছেন।

বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নিহত তিনজনের নাম নাঈম, বিলাল ও নোমান। এই ঘটনার পর সামভালে ইন্টারনটে পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানকার সব স্কুল।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের একটি প্রাচীন মসজিদে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশকে ঘিরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে রবিবার দফায় দফায় তীব্র সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন।

সহিংসতায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন পুলিশ সদস্য। ঘটনার পর গোটা এলাকায় তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শহরের যে মসজিদটিকে ঘিরে এই বিরোধ দেখা দিয়েছে সেটি ‘শাহী জামা মসজিদ’ নামে পরিচিত।

রবিবারের এই সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারে। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। মোরাদাবাদের বিভাগীয় কমিশনার অঞ্জনেয়া কুমার সিং জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়েছিল… পুলিশ সুপারের পিআরও’র পায়ে গুলি লেগেছে, পুলিশ সার্কেল অফিসার পেলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন এবং সহিংসতায় ১৫ থেকে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন।
মসজিদের স্থানে মন্দির ছিল দাবি, ভারতে পুলিশের গুলিতে তিন মুসল্লি নিহত
তিনি আরো দাবি করেন, একজন কনস্টেবলের মাথায়ও গুরুতর আঘাত লেগেছে এবং ডেপুটি কালেক্টরের পা ভেঙে গেছে। দ্য হিন্দু বলছে, সংঘর্ষের এই ঘটনার পর সামভাল তহসিলে ইন্টারনেট পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন ২৫ নভেম্বর (সোমবার) দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে।

এদিকে হিন্দু মন্দির ভেঙে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসিলম গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আদালতে আইনি লড়াইও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি আদালত ওই মসজিদ প্রাঙ্গণে সার্ভে করার নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। ওই মসজিদ ভবনটিতে আগে কোনো হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটা যাচাই করে দেখার জন্যই ওই সার্ভের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, মুঘল আমলে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির ভেঙে এই জামা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এবং এখন তা হিন্দুদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে– এই দাবি নিয়ে একদল আবেদনকারী আদালতের শরণাপন্ন হলে এই সার্ভের নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরী’র মতো ঐতিহাসিক গ্রন্থেই প্রমাণ আছে যে– ১৫২৯ সালে মুঘল বাদশাহ বাবর সামভালে হিন্দু মন্দির ভেঙে ওই মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। এই ‘ঐতিহাসিক সত্য’টি উদঘাটন করার জন্যই শাহী জামা মসজিদে সার্ভে চালানো প্রয়োজন বলে তারা দাবি করে আসছিলেন।

অন্যদিকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সার্ভের বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, ভারতের ধর্মীয় উপাসনালয় আইন ১৯৯১ অনুসারে দেশের স্বাধীনতার সময় কোনো মন্দির, মসজিদ বা গীর্জার চরিত্র যা ছিল তা বদলানো যায় না – সুতরাং সামভালের জামা মসজিদেও এই ধরনের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। এছাড়া মসজিদে এভাবে ‘সার্ভে’ চালানো হলে তা এলাকায় অযথা উত্তেজনা ছড়াবে বলেও তারা সতর্ক করে আসছিলেন।

Continue Reading

Trending