Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

নিউইয়র্ক প্রাইমারিতে বাংলাদেশি প্রার্থীদের জয় আসছে না


নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচনে বাংলাদেশিদের অনৈক্য প্রকাশ পেয়েছে। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের অভিবাসনের শত বছর পেরিয়ে গেছে। বহু জাতি–গোষ্ঠীর দেশ আমেরিকায় নিজেদের কোনো অস্তিত্ব এখনো প্রকাশ করতে পারেননি স্বদেশিরা। দেশের রাজনীতি নিয়ে সারা বছর নানা কোলাহলে লিপ্ত থাকলেও একজন স্বদেশি প্রার্থীর জন্যও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি নিউইয়র্কের প্রবাসীরা। এক ডজনের বেশি প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হলেও ২৩ জুন নির্বাচনে বাংলাদেশি কোনো প্রার্থীই জয়ের মুখ দেখেননি। ডাকযোগে পাওয়া ভোটের ফল যোগ করে কোনো প্রার্থীর জয় আসবে, তেমন আশাবাদ একদম ক্ষীণ।

এবারই প্রথমবারের মতো নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিরা আমেরিকার রাজনীতির মূলধারায় অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনের ফল পাওয়ার পর অবশ্য তাঁদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়নি। তাঁরা বলেছেন, যাত্রা শুরু হয়েছে। অনেক কিছু জানার ছিল, এ জানাকে এগিয়ে নিয়ে আগামী দিনের রাজনীতিতে নিজেদের সফলতা দেখবেন, এমন প্রত্যয় করেছেন কেউ কেউ।

নিউইয়র্কে এবারের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন মেরি জোবাইদা। ডিস্ট্রিক্ট ৩৭-এ আলোচিত প্রার্থী ছিলেন মেরি জোবাইদা। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন পশ্চিম কুইন্স থেকে দীর্ঘদিনের প্রতিনিধিত্বকারী ক্যাথরিন নোলানকে। মেরি জোবাইদার নির্বাচিত হওয়া নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলে নোলান পেয়েছেন ৩ হাজার ৭০১ ভোট এবং মেরি পেয়েছেন ২ হাজার ৩২৮ ভোট। ২৩ জুন রাতে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মেরি বলেন, এ নির্বাচন নিজেদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন করার সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁকে যাঁরা সমর্থন জানিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মেরি জোবাইদা।

এক বছর থেকে সক্রিয় থাকলেও নিউইয়র্কের স্বদেশি লোকজন ঐক্যবদ্ধভাবে মেরি বা অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করেননি। বাংলাদেশি প্রার্থী হিসেবে মেরি প্রার্থিতা ঘোষণার বেশ পরেই বাংলাদেশিদের মধ্যে একের পর এক প্রার্থী হতে থাকেন। এ নিয়ে বাংলাদেশিদের নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। ফলে, এখন পর্যন্ত কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিদের নিউইয়র্কে যে শক্তি আছে, তা একসঙ্গে মেরি বা অন্য কারও পক্ষেই কাজে লাগাতে দেখা যায়নি। যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজেও কোনো স্বদেশি সংগঠন বা নেতাদের দেখা যায়নি। যাঁরা সংগঠন করেন, তাঁরা নিজেরাই নানা দলে বিভক্ত।

নিউইয়র্কের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ১৪ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বদরুন নাহার খান। ডেমোক্রেটিক পার্টির তারকা কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিওর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেই তিনি ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলেন। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান একজন সমাজকর্মী। নির্বাচনে ওকাসিও পেয়েছেন ২৬ হাজার ১৮৭ ভোট ও বদরুন নাহার পেয়েছেন ১ হাজার ৯৬৫ ভোট।

নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সানিয়াত চৌধুরী। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৯৯৮ সাল থেকে এ আসনে নির্বাচিত হওয়া প্রার্থী কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্সের সঙ্গে। সানিয়াত চৌধুরী পেয়েছেন ৮ হাজার ৯৮৬ ভোট ও গ্রেগরি মিক্স পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৬ ভোট।

নির্বাচনে অপর আলোচিত প্রার্থী ছিলেন জয় চৌধুরী। ডিস্ট্রিক্ট ৩৪ আসনে তরুণ প্রার্থী জয় চৌধুরী পেয়েছেন ৪৯৯ ভোট, জয়ী প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৬৯৩ ভোট। নির্বাচনের এসব ফলাফল বেসরকারি। চূড়ান্ত গণনায় কিছুটা তারতম্য হলেও ভোটের এত ব্যবধান যে নির্বাচনে বাংলাদেশের কোনো প্রার্থীর বিজয় আসছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির শক্ত অবস্থান নিউইয়র্কে। এ রাজ্যে দলটির মূল চালিকা শক্তিও খুব শক্তিশালী। বাংলাদেশি প্রার্থীদের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক পার্টির মূল চালিকা শক্তির তেমন ঘনিষ্ঠতা এখনো গড়ে ওঠেনি। তেমনি ভোটার তালিকাভুক্তিসহ নির্বাচনী কৌশলে বাংলাদেশিরা কোনো নির্বাচনী এলাকায় এককভাবে নিজেদের অবস্থান দেখানোর সুযোগ পাননি। এর মধ্যেই ডজনখানেক প্রার্থীর কেউ নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন এবারের নির্বাচনে, এমন আশা ছিল অনেকেরই।

ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশি প্রার্থীদের পক্ষে এখানে-সেখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। জ্যামাইকার একটি ভোটকেন্দ্রে দিনব্যাপী অবস্থান করছিলেন প্রার্থী ইশতেহাক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো প্রস্তুতিই যে নেই, তা প্রার্থী হয়েই টের পেয়েছি। সবার আগে আমাদের অনেক স্বদেশি ভোটার তালিকাভুক্তই হননি। এ ছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করানোর কোনো কমিউনিটি উদ্যোগও ছিল না। সবাই ফেসবুকে আহ্বান জানিয়েছেন।’ এটিকে খুব ভালো কাজ উল্লেখ করে ইশতেহাক জানান, অন্যান্য কমিউনিটির লোকজন বিভিন্ন চার্চে বা ক্লাবে জমায়েত হয়েছে। দেখা গেছে, তাঁদের গাড়ি করে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বহু ব্যালট পেপারে তাঁর বা অন্য প্রার্থীর নাম পর্যন্ত নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে নাম লিখে দিতে হয়। এমনিতেই ব্যালট পেপার বেশ জটিল। নানা পদের জন্য বিরাট প্রার্থীর তালিকা। এর মধ্যে এসব নাম লেখা, সঠিক কেন্দ্রে যাওয়া—এসব নিয়ে হিমশিম খেতে দেখা গেছে ভোট দিতে যাওয়া অনেক বাংলাদেশিদের।

নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য কাজ করেছেন সাইফুল আলম। তিনি বলেন, এখানে বছরের পর যারা ডেমোক্রেটিক পার্টির পদ দখল করে আছে, তাদের সবকিছুই আগে থেকে ঠিক করা। তাদের ছক ভেঙে নতুন করে উঠে আসা যে সহজ নয়, তা এবারের নির্বাচনে নেমে বোঝা গেছে।

ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদে প্রায় ১৫০ ভোটে পিছিয়ে থাকা ফারজানা চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশিরা নিজেরাই যেখানে ঐক্যবদ্ধ নই, সেখানে আমাদের জন্য ভোট দিতে অন্যরা ঐক্যবদ্ধ হবে, তা আশা করাটা কঠিন। তারপরও এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের মূলধারার রাজনীতির অন্দরের অনেক বিষয় জানা গেছে বলে তিনি মনে করেন, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনে দাঁড়ানো যেকোনো প্রার্থীর জন্য কাজে লাগবে।’

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.