Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘মুসলমানদের ভয়ে’ জার্মানি ছেড়ে পালানোর দাবি কতটুকু সঠিক?


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ আলোচনার সূত্রপাত,
জার্মানির মোট জনসংখ্যার ৫%-এর মতো মুসলমান। কিন্তু তাদের জন্য দেশটির সংখ্যগরিষ্ঠ খ্রিস্টানদের “দেশ ছাড়ার মতো” পরিস্থিতি কি আদৌ তৈরি হয়েছে? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক “অনুসন্ধানী প্রতিবেদন” থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ আলোচনার সূত্রপাত।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারাগুয়েতে চলে যাচ্ছেন “অনেক” জার্মান। আর এই যাওয়ার কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, কোভিড টিকা না নেওয়া। দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে মুসলমান অভিবাসীদের প্রতি তাদের “অস্বস্তি”।

বিবিসির এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় কারণটি নিয়ে আমার নিজেরই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই কথিত কারণটি জার্মানিতে উ.গ্র ডানপন্থী দলগুলোর মুসলমান এবং অভিবাসীবিরোধী প্রচারণার পালে নতুন করে হাওয়া দেবে। তাই এক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় যতটা যত্নবান হওয়ার দরকার, বিবিসি ততটা ছিল না।

জার্মানদের প্যারাগুয়েতে গিয়ে বসবাস করার ঘটনা নতুন নয়। গত একশো বছর ধরেই চলছে এই চর্চা। আর শুধু প্যারাগুয়ে নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশে গিয়ে জার্মানরা এরকম আবাসন গড়েছে। অবশ্য, এটা সত্য যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পর আগের বছরের তুলনায় গত বছর বেশি সংখ্যক জার্মান নাগরিক নিজ দেশ ছেড়ে প্যারাগুয়ে এবং আরো কয়েকটি দেশে গিয়েছেন।

প্যারাগুয়েতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানির ডয়চে ভেলে, টাগেসশাও, এসভেআর এবং ব্রিটেনের গার্ডিয়ানের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো। আলাদা প্রতিবেদনগুলো থেকে স্পষ্ট যে, মূলত কোভিড টিকা নিতে আগ্রহী নন এমন একদল জার্মান এই সময়ে প্যারাগুয়েতে আশ্রয় নিয়েছেন।

এসব প্রতিবেদনের কোনোটিতে সাম্প্রতিক সময়ে “মুসলমানদের কারণে সৃষ্ট অস্বস্তিতে” জার্মানদের প্যারাগুয়ে যাওয়ার কথা উঠে আসেনি। এমন দাবি কিছুটা বিস্ময়কর। যদি মুসলমানদের বিষয়টিও টিকা না নেয়ার পাশাপাশি একটি বড় কারণ হয় তাহলে এসব মূলধারার প্রথম সারির গণমাধ্যমের কেন এটা চোখে পড়লো না তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। প্যারাগুয়েতে জার্মান বংশোদ্ভূত অভিবাসীর সংখ্যা জার্মানির সরকারের হিসেবে ২৬ হাজারের মতো। এরা শুধু গত বছর নয়, গত কয়েক দশকে দেশটিতে গিয়েছেন। তাহলে গত বছর ঠিক কতজন জার্মান জার্মানি ছেড়ে প্যারাগুয়েতে স্থায়ী আবাস গড়েছেন?

এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেদনগুলো সংখ্যাটি কয়েকশোর মধ্যে রাখছে, কয়েক হাজার নয়। গত কয়েক দিনে দেখা গেছে, বিবিসির প্রতিবেদনটিকে কোট করে উগ্র ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগ, সংবাদপত্রে বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এমন চর্চাও নতুন নয়।

তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল ২০১৫ সালে সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিলে মধ্যপ্রাচ্যের ১০ লাখের মতো মানুষ ইউরোপের দেশটিতে প্রবেশ করে। এই শরণার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই মুসলমান। মার্কেলের এই মহানুভবতা জার্মান সমাজের একটি বড় অংশ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক প্রশংসিত হলেও একটি গোষ্ঠী সেটি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে।

অভিবাসী ও মুসলমানবিরোধী হিসেবে পরিচিত উগ্র ডানপন্থী দল “অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড” বা এএফডি প্রচারণা শুরু করে যে জার্মানিতে ইসলামের কোনো স্থান নেই। আর তাদের কারণে জার্মানির নিরাপত্তা নষ্ট হতে পারে। জার্মানরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

এএফডির সেই প্রচারণার পালে শুরুতে বেশ হাওয়া লেগেছিল। দলটি রাতারাতি জার্মানির তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। তবে মুসলমান শরণার্থীদের নিয়ে যে শঙ্কার কথা দলটি জানিয়েছিল, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সেই শঙ্কার কোনো বাস্তব প্রমাণ মেলেনি।

বরং সেই শরণার্থীরা এখন জার্মানির অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছেন নানা খাতে কর্মীর চাহিদা পূরণ করে। এএফডিও গত কয়েকবছরে নিজেদের জনপ্রিয়তা আর বাড়াতে পারেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য উগ্র ডানপন্থীরা কোভিড লকডাউন, টিকার বিরোধিতা করে রাজনীতির কিছুটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাও ধোপে টেকেনি। প্যারাগুয়েতে চলে যাওয়া জার্মানদের একটি অংশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ত্যাগ করা নাৎসি। সেদেশের জার্মান অভিবাসীদের একাংশের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উগ্র ডানপন্থী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশের কথা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও প্যারাগুয়েতে ইসলাম ধর্মালম্বীরাও সুখে-শান্তিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, তারপরও সেদেশে যাওয়া দুয়েকজন জার্মান মুসলমানদের প্রতি তাদের “অসন্তোষ” থেকে প্যারাগুয়েতে গিয়ে থাকার কথা বলে থাকতে পারেন।

বিবিসি “অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের” নামে শুধু তাদের কথা প্রকাশ করেছে, কিন্তু তারা কোন প্রেক্ষাপটে, কোন আদর্শ থেকে সেকথা বলছেন এবং সেই কথার সঙ্গে জার্মানির বর্তমান পরিস্থিতির কতটা মিল রয়েছে তা আর অনুসন্ধান করেনি। এটা এই প্রতিবেদনের ঘাটতি যা উগ্র ডানপন্থীদের হাতে মুসলমানবিরোধী প্রচারণা চালানোর এক অস্ত্র তুলে দিয়েছে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.