Beanibazarview24.com
বাঙালির নারীর বয়স নিয়ে সবার এত মাথা ব্যাথা দেখলে মাঝে মধ্যে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কেউ ভালো কিছু করলে তার কাজের সমাদরের চেয়ে বয়স নিয়ে আলোচনা মুখ্য হয়ে যায়।
আমি জয়া আহসানের একজন মহাভক্ত বলব না! তবে তাঁর চেহারা, হাসি, কথা বলার ধরন, পোষাক, হাঁটা-চলাফেরা আমার বেশ ভালো লাগে। আর অভিনয়ে তাকে খুব দক্ষ মনে হয়। নয়তো পশ্চিমবঙ্গে বাঘা বাঘা অভিনেত্রীদের সঙ্গে লড়াই করে সে টিকে থাকত না। আমি কলকাতায় জয়ার অভিনীত প্রায় সব সিনেমা দেখেছি। দেখেছি আর বিস্ময়ে ভাবার চেষ্টা করেছি- সে আমাদের বাংলাদেশের মেয়ে! এত স্মার্ট, এত রূচিসম্পন্ন! বেশীরভাগ সিনেমাতে দেখেছি সে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে!
ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্ট খোলার পরে প্রথম থেকে জয়া আহসানকে ‘ফলো’ করি। নিউজফিডে মাঝে মাঝে তাঁর বিভিন্ন ভঙ্গীমার ছবিগুলি দেখি। দেখে খুব ভালো লাগে। নিজের মধ্যে অনুপ্রেরণাবোধ করি। কিন্তু অবাক হয়ে যাই বিভিন্নজনের মন্তব্য পড়ে। বিস্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করি অধিকাংশ মানুষের মনোভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। তারা সেখানে জয়াকে দাদী, খালাম্মা ইত্যাদি হিসেবে সম্বোধন করে। তার বয়স নিয়ে নানা রকম ‘স্পেকুলেশন’ করে।
আমি জানিনা, জয়ার বয়স কত? ধরে নিলাম, তার বয়স ৪০ বছর। কিন্তু তাকে যদি তার অর্ধেক বয়সী অর্থাৎ ২০ বছর মনে হয়, এটাতো তাঁর অর্জন। এজন্য তাকে অভিনন্দিত করতে হবে। কারণ বয়স ধরে রাখা সহজ কাজ নয়। এজন্য প্রচুর পরিমাণে খাটতে হয়। নিশ্চয়ই তিনি নিয়মিত যোগব্যায়াম কিংবা জিমে গিয়ে ঘাম ঝরান। নিশ্চয়ই খুব মেপে মেপে খান। আমরা যারা কথায় কথায় চিকেন বিরিয়ানি কিংবা ভ্যানিলা আইসক্রিম খাই, নিশ্চয়ই সেটা তিনি করতে পারেন না! অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েই তাঁর অর্জন! তাহলে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাব না কেন!
সাধারণ দর্শকদের ‘নেটিজেন’ বলা হয়। জয়ার পোস্টে সব সময় দেখি, এই নেটিজেনদের বিশাল অংশ কথা বলে তার বয়স নিয়ে। তার কোন অভিনীত চরিত্রের প্রশংসা নেই। নেই কোন তার অভিনয়কে ঘিরে সুখস্মৃতি। আর সমালোচনা যদি করতে হয়, সেটা হতে হবে গঠনমূলক, যুক্তি দিয়ে তুলে ধরতে হবে নিজের বক্তব্য। বাস্তবে সবাইকে মন্তব্য করতে দেখা যায়- জয়া কোন দোকানের চাল খায়। কিভাবে বয়স লুকায়! কেউ বলে খালাম্মা, কেউ এক কাঠি সরেস, দাদী বলেও সম্বোধন করে কেউ কেউ। একজন চল্লিশোর্ধ নারী কেন এত সুন্দর থাকবেন, এতটা পরিশীলিত-বুদ্ধিদ্বীপ্ত অভিনয় করবেন, এটা তারা মেনে নিতে পারে না।
বয়স নিয়ে মাথাব্যাথা শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো উপমহাদেশের মানুষের মধ্যেই দেখি। কুড়িতেই তারা বুড়ি। ইন্সট্রাগ্রামে আমি মালাইকা অরোরা ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকেও ফলো করি। তাদের দুজনকে আমার ফিটনেসের আইকন মনে হয়। আকাশছোঁয়া আত্নবিশ্বাস তাদের। মালাইকা কোনদিন কোন সিনেমাতে কোন বড় রোল না করেও অনেক সিনে তারকার চেয়ে বেশী মনোযোগ পান। ওদিকে বলিউড যাকে বয়স্ক বিবেচনা করে নায়কের বড় বোন কিংবা সাইড নায়িকার রোলে নামিয়ে আনতে চেয়েছিল, সেই প্রিয়াঙ্কা এখন দাপিয়ে বেড়ান হলিউডে। এই মুহূর্তে হলিউডে খুব বেশী তারকা নেই যার প্রিয়াঙ্কার মত ফলোয়ার আছেন।
প্রিয়াঙ্কা ও মালাইকার সমস্যা হল তারা দুজনেই নিজেদের চেয়ে কম বয়সী পুরুষদের সঙ্গে প্রেম করছেন কিংবা বিয়ে করেছেন। প্রিয়াঙ্কা বিয়ে করেছেন আমেরিকার কোটি মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ নিক জোনাসকে। ‘আমেরিকান আইডল’ এর একজন বিচারক সে। নিক জোনাস ও প্রিয়াঙ্কা এই মুহূর্তে হলিউডের ‘পাওয়ার’ সেলিব্রেটি কাপলদের একজন বলে বিবেচনা করা হয়। অথচ নিক-প্রিয়াঙ্কার বেশীরভাগ ছবিতে লোকজনকে দেখি মন্তব্য করতে- ‘মা-ছেলে’ কিংবা ‘আন্টির সঙ্গে’ ইত্যাদি। আর মালাইকা একা ছবি দিক কিংবা তার বয়ফ্রেন্ড অর্জুন কাপুরের সঙ্গে ছবি পোস্ট করুক- সব সময় তার বয়স নিয়ে বাঁকা মন্তব্য থাকে।
এই সব নেটিজেনদের কাছে বয়সটাই মুখ্য। তাদের কাজের মূল্যায়ন নয়। আসলে এসব নেটিজেন বা সাধারণ মানুষদের এক ধরনের ‘টিপিক্যাল মাইন্ড সেট আপ’ থাকে। সেখানে তারা আগে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব আইন করে রাখে। নিজের বয়সের চেয়ে ছোট কারো সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে করা যাবেনা। চল্লিশের পরে কোন আকর্ষণীয় ছবি পোস্ট করা যাবে না। ছবি পোস্ট করতে হবে ‘খালাম্মা’ ‘খালাম্মা’ টাইপ।
অথচ ইউরোপ আমেরিকায় বয়স কোন ব্যাপার নয়। এই নিয়ে বেশীরভাগ মানুষ কেউ মাথা ঘামায় না। হলিউডে বেশীরভাগ নায়িকারা তাদের প্রথম হিট সিনেমার দেখা পান চল্লিশ বছরের পরে। ভারতবর্ষে যে বয়সে নারীকে ‘বড় বোন’ ‘ভাবী’র চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। ইন্সট্রাগ্রামে আমেরিকান গায়িকা জেনিফার লোপেজের পোস্টে দেখেছি ভক্তদের কি রকম উচ্ছাস তাকে ঘিরে। তাঁর যে বয়স ৫২ বছর এই নিয়ে কখনও কেউ মন্তব্য করেনা।
প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলেই জয়া আহসান অনন্যা। তার প্রতিটি শব্দের প্রক্ষেপণ অনুকরণ করার মত। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তার অভিব্যাক্তিগুলি তাঁর মেধার স্মারক। মেধা, সৌন্দর্য্য, স্মার্টনেসের প্রশংসা না করে যখন কারো কাছে বয়সটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার সঙ্গে আর বেশী কথা না বাড়ানোই ভালো।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.