সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল থেকে কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে দুপুরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ভারতের চেরাপুঞ্জির আকাশে মেঘ থাকলে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর চেরাপুঞ্জিতে একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। উজানের পাহাড়ি ঢল কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। অন্যান্য নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয় নি কোনো এলাকা। কিছু কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ভেসে ওঠতে শুরু করেছে।
এদিকে হাওরের পানি নামতে না পারায় গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা সদরের সড়কগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। তবে সুরমা নদীর পানি কমতে থাকায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি কিছুটা কমেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সময় বেশকিছু রাস্তা নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিলেট নগরীর আম্বরখানা-সাহেবের বাজার সড়কের বদনা ছড়ায় পানির প্রবল চাপে একটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সিলেট নগরীর সাথে সাহেবের বাজারসহ পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
ঈদের আগেরদিন থেকে এ পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট নগরে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক। সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীতে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এদিকে বন্যার পানিতে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হওয়ায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, তালতলা, জামতলা, বাগবাড়ির বিভিন্ন সড়কের পানি নামতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন আশ্রিতরা।
অপরদিকে, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় সড়ক যোগাযোগ চালু হয় নি। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যার জন্য উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাথে পলিমাটিকে দায়ী করা হচ্ছে। নদী খননের উপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটর সাদীখাল ব্রিজে বন্যা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, দেশে ৯টি ড্রেজিং স্টেশন করা হচ্ছে, নদীতে চর জাগলে তাৎক্ষণিক অপসারণ করা হবে, এতে যেমন নদী ভাঙন কমবে তেমনি নদী প্লাবিত হবে না। দেশে ড্রেজিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে এমন উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, উজান থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি নেমে এসে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। ছোট ছোট চর জাগলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যাতে তাৎক্ষণিক তা অপসারণ করতে পারে সে জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে তিনি বিমানযোগে সিলেট পৌঁছে সাদীখাল ব্রিজে যান। তিনি বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি নদী খননের উপর জোর দেন।
এদিকে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন-ভিত্তিক ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০২, শেওলা পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছিল।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটের আকাশে মেঘ রয়েছে। যদি তা আসে সাথে বজ্রপাতও থাকতে পারে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের সকলের ছুটি বাতিল করে বন্যার্তদের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বনৗা পরিদর্শন করেছেন। তিনি নদী খননের ওপর জোর দিয়েছেন। আমরাও চাই ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বাড়ানো হোক। তাহলে আর নদী প্লাবিত হবে না।