Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অবৈধপথে ইউরোপে মানব পাচারে বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য







সিরিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ এখন অনেকটাই স্তিমিত। মানব পাচারকারীদের চোখ তাই বাংলাদেশে। অবৈধ এ বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশকে তারা দেখছে অসীম সম্ভাবনার বাজার হিসেবে। আকাশপথে প্রথমেই তাদের দুবাই বা ইস্তাম্বুল হয়ে নেয়া হচ্ছে লিবিয়ায়। সেখানে কিছুদিন রাখার পর সাগরপথে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ইতালিতে। অবৈধ অভিবাসনের এ ভয়ঙ্কর পন্থায় মানব পাচারকারীরা ঘরে তুলছে দৈনিক ১০ লাখ পাউন্ড বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছরে অবৈধ এ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।



আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি গেছেন বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ জন নাগরিক। এর মধ্যে প্রায় নয় হাজারই বাংলাদেশী। এর বড় অংশেরই আশ্রয় হয়েছে দেশটির বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে।

ইতালির সিসিলিতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশী এমন শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান ও সাবেক এমপিরা। কনজারভেটিভ মিডল ইস্ট কাউন্সিলের (সিএমইসি) জন্য তৈরি ওই প্রতিবেদনে মানব পাচারকারীদের অবৈধ এ বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা যে খুবই সংগঠিত, সে তথ্যও উল্লেখ করেছেন এমপিরা।



প্রতিবেদনে তারা বলেছেন, সুসংগঠিত মানব পাচার চক্রগুলো অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশীদের প্রথমে আকাশপথে ইস্তাম্বুল অথবা দুবাই হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে রাখে। লিবিয়ায় অবস্থানকালীন এ সময়টায় ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হতে হয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। পরবর্তীতে ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের। প্রতিদিন শখানেক নৌকা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরের উদ্দেশে ছাড়ে, যেগুলোর প্রতিটিই অভিবাসনপ্রত্যাশীতে ঠাসা থাকে।



এর মাধ্যমে তারা প্রতিদিন আয় করে প্রায় ১০ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশের পাশাপাশি চক্রটির নেটওয়ার্ক রয়েছে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট ও গিনির মতো দেশেও।

নতুন এ পথে মানব পাচারকে উঠতি লাভজনক ব্যবসা উল্লেখ করে সিএমইসির পরিচালক ও সাবেক টরি এমপি শার্লট লেসলি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য সানকে বলেন, এ মুহূর্তে এটা খুবই বর্ধনশীল অপরাধমূলক ব্যবসা। আর এ ব্যবসার জন্য বাংলাদেশকে তারা দেখছে সীমাহীন সম্ভাবনার বাজার হিসেবে।



পাচারকারী চক্র শনাক্ত করা ছাড়া এ অপরাধ থামানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশ হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরেই বন্ধ। এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। ইতালির শরণার্থী শিবিরে থাকা বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে এ চক্রকে শনাক্ত করতে হবে। এরপর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ভয়ঙ্কর যাত্রা চলতেই থাকবে।



বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে ইতালিতে অবৈধ অভিবাসন যে বেড়েছে, তা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যে। সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ইতালিতে পাড়ি দিয়েছিলেন ৪ হাজার ১৩৫ জন। চলতি বছরের নয় মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮০৭। এ সময়ে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি দেয়া নাইজেরীয়দের সংখ্যা ছিল বাংলাদেশীদের চেয়ে বেশি, ১৭ হাজার ৪৮।



পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে কেউ যাতে সাগরপথে পাড়ি না দেন, সেজন্য এলাকাভিত্তিক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানান জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সরকার সমুদ্রপথে বিদেশ পাড়ি না দেয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদেশে চাকরির নামে কেউ যাতে দালালের খপ্পরে না পড়ে, সে ব্যাপারেও জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। তার পরও দালালদের প্ররোচনায় সাগরপথে ইতালি পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে।

বাংলাদেশে মানব পাচার পরিস্থিতি যে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদন-২০১৭তেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। গত জুনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে মানব পাচার প্রতিরোধে সরকার ন্যূনতম মান বজায় না রাখায় বাংলাদেশ ‘টিয়ার-২’ থেকে এক ধাপ নেমে ‘টিয়ার-২ ওয়াচলিস্ট’ বা দ্বিতীয় স্তরের নজরদারিতে থাকা দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।



প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মানব পাচার দমন ও সুরক্ষা আইন, ২০১২ বাস্তবায়নের জন্য বিধি চূড়ান্ত ও তা প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমান্ত ও জনশক্তিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ধরনের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত, মামলা ও দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া সরকার শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে অর্থ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে জনশক্তি রফতানি চুক্তি করেছে। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়াই অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর জন্য এজেন্টগুলোর কর্মকাণ্ডও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।



মানব পাচারকারী চক্রগুলো সাধারণত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয় বলে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম। তিনি বলেন, তারা মূলত ফ্রি ভিসায় বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু লিবিয়া পৌঁছানোর পর আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে। কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত করে অপরাধীদের ধরা হয়। অনেককে ফেরতও আনা হয়েছে।

পাচার হয়ে যাওয়া আরো কিছু ব্যক্তি দেশে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশী পক্ষকে ধরা গেলেও বিদেশী চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে।





You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.