Sunday, June 8, 2025

Top 5 This Week

Related Posts

সিলেটে চামড়া নিয়ে আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদের

এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে আগ্রহ কম সিলেটের ব্যবসায়ীদের। নানা সংকটে এ ব্যবসায় অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। লোকসান গুণতে গুণতে অনেকে এ ব্যবসাও ছেড়ে দিয়েছেন।

এ অবস্থায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বড় ধরনের ধস নামতে পারে বলেও ধারণা ব্যবসায়ীদের। তবে বকেয়া তুলতে সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করার কথা বলছেন কেউ কেউ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা এক লাখের বেশি। প্রতিবছর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপর সেটি প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়।

ব্যবসায়ীদের দাবি, গত ১৫ বছর ধরে সিন্ডিকেটে জিম্মি চামড়া ব্যবসা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে ইচ্ছেমতো দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এতে করে সারা বছর লোকসানের পর ঈদে এসেও একই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়।

তাছাড়াও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়াও অনুকূলে নেই। এ অবস্থায় নতুন করে চামড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।

এ বছর সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন; গত বছর এ দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ টাকা ৬০ টাকা গত বছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।

এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা। যা আগের বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা।

এছাড়া এ বছর প্রতি বর্গফুটে চামড়ার দামের পাশাপাশি ছোট গরুর আয়তন হিসেবে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ দাম ঢাকায় হবে ১৩৫০ টাকা।

সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের পশু ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় সিলেটে প্রতিপিস গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কেনা হয়। কোনোটি আবার ৬০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে আরও খরচ পড়ে। সবশেষে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। কেনা দামেও অনেক সময় তারা নিতে চান না। বাধ্য হয়ে কমদামে তাদের কাছে এগুলো বিক্রি করতে হয়। এক বছরের টাকা পরের বছর দেওয়ার শর্তেও অনেক সময় চামড়া ছাড়তে হয়।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০১৪ সালের এক কোটি টাকা এখনও ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে। গত বছরের আরও ৮ লাখ টাকা বকেয়া। এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ করার আগ্রহ নেই। তবুও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যতটুকু সম্ভব ততটুকু বিনিয়োগ করবো।

তিনি আরও বলেন, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে একরকম। কিন্তু ট্যানারি ব্যবসায়ীরা অর্ধেক দামে চামড়া কিনতে চান। গত বছর সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করলেও ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে। বিগত কয়েক বছর ধরে এভাবেই সিন্ডিকেটে জিম্মি এ ব্যবসা।

সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সদস্য হামিদ আহাদ বলেন, গত বছরের লবণযুক্ত অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার খাসির চামড়া গুদামে প্রক্রিয়াজাত করে রাখা। এগুলো ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে কেনা। আর প্রক্রিয়াজাত করতে আরও খরচ পড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এখন প্রতি পিস ২০ টাকা দরে নিতে চাচ্ছে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে আর চামড়া কেনার সাহস হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি বলেন, এবার শেষবারের মতো চামড়ার ব্যবসা করবো। এ বছরও যদি লোকসান গুণতে হয় তাহলে আর চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে দেবো। সরকার এ ব্যবসা করুক।

বিগত চার-পাঁচ বছরে সিলেটে চামড়া ব্যবসায়ী অর্ধেকে নেমে এসেছে উল্লেখ করে শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামীম আহমদ জানান, দাম কমে যাওয়া, বকেয়া পড়ে থাকা, সরকারের সমন্বয়হীনতার কারণে এ ব্যবসা থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নানা জটিলতার কারণে এখন চামড়া ব্যবসায় আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। বছরের পর বছর লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। সরকার উদ্যোগ না নিলে একসময় এ ব্যবসায় আর কেউ থাকবে না।

Popular Articles