অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ। ভিসা চলে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশনের চিঠিও হাতে। জীবনের বড় স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সেই আনন্দে ভাসছিল সুনামগঞ্জের মেধাবী তরুণ ইয়াহিয়া সামী ও তার পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করেই সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল। সেই ছেলেটি এখন শুয়ে আছে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে। মৃত্যুর সঙ্গে তার চলছে কঠিন যুদ্ধ । আর তার এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার।
২০২১ সালে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা ইয়াহিয়া সামী উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে। স্বপ্ন ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার পরও অক্লান্ত পরিশ্রমে এগিয়ে যাচ্ছিল মেধাবী সামী।
২০২৪ সালের ৫ মে সামী অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। ভিসাও চলে আসে সময়মতো। পরিবারে নেমে আসে আনন্দের বন্যা। কিন্তু ৪ জুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে সামী। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি গুরুতর মনে না হলেও, বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে—সামী আক্রান্ত হয়েছে বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগ গুইলেন বার সিনড্রোমে।
জানা যায়, বিরল এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের স্নায়ুকে আক্রমণ করে। ফলে ধীরে ধীরে পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রোগী হাত-পা নাড়াতে পারেন না, এমনকি শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। আক্রান্তদের লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয় দীর্ঘ সময়।
সামী বর্তমানে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ট এডোরার আইসিইউ ইউনিটের ভেন্টিলিশন বা লাইফ সাপোর্টে আছে। চিকিৎসক মতিউর রহমানের অধীনে চিকিৎসা চলছে তার।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রোগটি থেকে সামীকে সুস্থ করে তুলতে ইতোমধ্যে তাকে দিতে হয়েছে ৩০টি ইমিউনোগ্লোবুলিন ইনজেকশন, যেগুলোর প্রতিটির দাম প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা।
সামীর পরিবার জনায়, এই ইনজেকশনসহ ওষুধ, ভেন্টিলেটর খরচ, আইসিইউ বিল ইত্যাদি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টাকা বিল আসছে হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হবে—এজন্য প্রয়োজন আরও ২০-৩০ লাখ টাকা কিংবা তারও বেশি।
সামী সুনামগঞ্জের শহরতলীর আলীপাড়া এলাকার হোমিও চিকিৎসক এম আর শামীম ও গৃহিণী রুনা আক্তার দম্পতির বড় সন্তান। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে সামী পরিবারের আশা-ভরসা। কিন্তু আজ সেই ছেলেটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছেন তার বাবা-মা। দোকান বিক্রি করেছেন, সঞ্চয় শেষ করেছেন। তবুও থেমে যেতে হচ্ছে, কারণ আর সামর্থ্য নেই।
সামী’র বাবাকে তার ছেলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, ছেলের অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার খবর যখন পেলাম, মনে হচ্ছিল আমাদের সব স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি। কিন্তু আজ ওকে দেখে মনটা ভেঙে যায়। যা ছিল সব দিয়ে দিয়েছি। এখন জানি না কীভাবে চালাব। আল্লাহর দয়ার পাশাপাশি সমাজের সহানুভূতিই এখন একমাত্র ভরসা।
সামীর চিকিৎসার খরচ যোগাতে তার বন্ধুরা এখন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, সামাজিক সংগঠনে ছুটছেন সহযোগিতার আশায়। ফেসবুকে পোস্টে আহ্বান করা হচ্ছে সামীকে সাহায্য করতে।
সামীর সাবেক সহপাঠী ইকরাম সিয়াম বলেন, সামীর স্বপ্ন যেন অর্থাভাবে থেমে না যায়, তাই আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সুনামগঞ্জের যারা সামর্থ্যবান, তাদের সবার কাছে অনুরোধ— আপনার একটুকু সহায়তা একটা প্রাণ বাঁচাতে পারে।
সামীর সহপাঠী ছাড়াও শহরের সেচ্চাসেবী অনেকেই সুনামগঞ্জ শহরে বিভিন্নস্থানে দাঁড়িয়ে পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করছেন। ফেসবুকে চলছে হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন, লাইভ, ভিডিও বার্তা। উদ্দেশ্য একটাই—মেধাবী তরুণ ইয়াহিয়া সামী যেন টাকার কাছে হেরে না যায়। সামী যেন হেরে না যায় জীবনের কাছে, যেন ফিরে আসে তার স্বপ্নের পথে। সেজন্য সমাজের বিবেকবান মানুষের সহানুভূতি চেয়েছে তার পরিবার ও বন্ধুরা।
মেধাবী সামীর প্রাণ রক্ষায় মায়ের ব্যাংক একাউন্ট: Mst Runa Akter Chowdhury, A/c 620110 3433 672001, Brac Bank, Sunamgonj Branch, Bangladesh) ও বিকাশ (পারসোনাল) মতিউর রহমান শামীম তালুকদার ০১৬৭৭৮৯৫৮৮২ নাম্বারে অর্থ সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।