Beanibazarview24.com
চার ফুট লম্বা লো’হার রডে এক থেকে দেড় ফুট অংশে সারি সারি পেরেকের মতো ধা’রাল কাঁ’টা লাগানো। এ রকমই বেশ কিছু কাঁটা লাগানো লোহার রড উ’দ্ধার হয়েছে কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের গলওয়ান থেকে। চীনা সে’নাদের এমন অ’স্ত্রের আ’ঘাতে সোমবার রাতে সেখানে ভারতের ২০ সে’না নিহ’ত হন।
ভারতের দাবি, সংঘ’র্ষে ৪৫ চীনা সৈ’ন্য হ’তাহত হয়েছে। তবে চীনের পক্ষ থেকে দুই পক্ষে সং’ঘাতের কথা বলা হলেও এই ঘটনায় হ’তাহত নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি। এছাড়া সং’র্ষে কোনো পক্ষ থেকেই যে গু’লির ঘটনা ঘটেনি তা অবশ্য দুই পক্ষই স্বীকার করে নিয়েছিল আগেই।
ভারতীয় সেনার দাবি, ‘ক্লোজ কমব্যাট’ বা হা’তাহাতির পর্যায়ে এ ধরনের রডের আ’ঘাত আ’গ্নে’য়াস্ত্রর থেকেও বেশি প্রাণঘা’তী। ভারতীয় গণমাধ্যম ছাড়াও বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো সেদিনের ওই রক্তক্ষ’য়ী সং’ঘর্ষে চীনের ব্যবহৃত এই অ’স্ত্র নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
হা’মলায় আহ’ত ভারতীয় সে’নারা জানিয়েছেন, প্রায় এক কোম্পানি জওয়ান (১০০ থেকে ১২০ জন) সেদিন চীনা বাহিনীর হা’মলার মুখে পড়েন। তাদের কথা থেকে স্পষ্ট, পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায় ভারতীয় জওয়ানদের ঘিরে ফে’লে হা’মলা করে তুলনায় কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি থাকা চীনা সে’নারা।
চীনা সে’নাদের কাঁ’টা লাগানো রডের আ’ঘাতে ভারতের ২০ সে’না নিহ’ত হয়। এছাড়া সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা চার ভারতীয় সে’নার অবস্থার এখন উ’ন্নতি হয়েছে। সে’নাদের বেশিরভাগ আ’ঘা’ত পেয়েছে মাথায়। এই ঘটনার পর অবশ্য উ’ত্তেজনা প্রশমনে ফের ভারত-চীন সামরিক পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, বৈঠক শুরু হলেও দুই দেশই সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছে। নয়াদিল্লি সে’নাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় র’সদের ছাড়পত্র দিয়েছে। এছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তা স্থানীয় স্তরেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবুজ স’ঙ্কেতও দিয়েছে মোদি সরকার।
দুই দেশের সীমানা নির্ধারণকারী প্রকৃত নি’য়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) থাকা সে’নাদের জন্য ‘বডি আরমার’ বা বিশেষ ধরনের ব’র্মের মতো পোশাক পাঠিয়েছে ভারত। সাধারণত আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ এ ধরনের পোশাক পরে। এই পোশাক ধারা’ল অ’স্ত্রের আ’ঘা’ত রুখতে পারবে বলে জানানো হচ্ছে।
সোমবারের সং’ঘর্ষ ও তার আগের উ’ত্তেজনার নেপথ্য ঘটনা
সোমবারের সংঘ’র্ষের ঘটনাকে সামরিক বিশ্লেষকরা উদ্বে’গজনক বলছেন এই কারণে যে, দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের সীমানা সং’যোগ থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে চার দশকে কোনো পক্ষে প্রাণহা’নির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে অরুণাচলে শেষ বার মৃ’ত্যু হয়েছিল ৪ ভারতীয় সেনার।
দুই এশীয় পরাশক্তি কয়েক দশক ধরে বৃহত্তর জনমানবশূন্য অঞ্চল নিয়ে লড়াই করে আসছে। বিতর্কিত এসব সীমান্ত নিয়ে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষি’প্ত যু’দ্ধ হয়েছিল। অবশ্য ভারতের তাতে শো’চনীয় পরা’জয় ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী এই দেশ দুটির মধ্যে সামরিক উ’ত্তেজনার ঘটনা বেড়েছে।
কয়েক বছর ধরেই দুই দেশের সীমানা বিভা’জনকারী প্রকৃত নি’য়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) ভারতের সড়ক ও সেতু বানানো নিয়ে চীনের ধারাবাহিক অস’ন্তোষকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে এ উত্তেজনার শুরু। ভারত বলছে, নিজেদের সীমানার ভেতর স্থানীয় মানুষের জন্যই এসব অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে।
চীন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে কিংবা সংস্কার করা হচ্ছে এমন সড়কের সংখ্যা ষাট এর বেশি। মূলত লাদাখ থেকে ভারতে বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি পর্যন্ত আড়াইশো কিলোমিটারের সড়ক নিয়েই চীন আপ’ত্তি জানিয়ে আসছে। গত বছরের অক্টোবরে এই সড়কটির উদ্বো’ধণ করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
স্থানীয়দের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে বলে নয়াদিল্লি দাবি করলেও চীনের গণমাধ্যমগুলো সী’মান্তে উস’কানির জন্য ভারতকে দায়ী করে আসছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের এসব অবকাঠামো নি’র্মাণে চীন তাই বারবার বাধা দিয়ে আসছে। কৌশলতভাবে লাদাখের গলওয়ান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষ উত্তেজনার শুরু গত মে মাসের শুরুতে। তিব্বত ও লাদাখ সী’মান্তে পারমাণবিক শক্তিধ’র দেশ দুটির সে’নাদের মধ্যে হা’তাহা’তি-ধ’স্তাধ’স্তি’র মধ্য দিয়ে। মে মাসের শুরুতে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেক ছাড়াও নেপাল সীমান্তবর্তী সিকিমের নাকু লায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে উ’ত্তেজনা ছড়ায়।
গত ৫ মে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, চীনা সেনারা তিনটি আলাদা পয়েন্টে সীমানা পে’রিয়ে তাঁবু এবং প্রহরী চৌকি তৈরি করেছিল এবং মৌখিক সত’র্কবাণী দেওয়া সত্ত্বেও তারা ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অগ্রাহ্য করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবি’তন্ডা ও ধ্ব’স্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
৯ মে সিকিম সী’মান্তে সেনাদের ধ্ব’স্তাধস্তি ও পাথর নিক্ষেপের ফলে সৃষ্ঠ সং’ঘর্ষে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ও চীনা সে’না আহ’ত হয়। ভারত জানায়, লাদাখ অঞ্চলে সীমানা পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটারে মধ্যে একাধিক ছাউনি গড়েছে চীনা সে’নারা। এরপর ভারতও ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত সে’না মোতায়েন করে।
এরপর স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা সং’ঘাত নিরসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কূটনৈতিকভাবে বিবাদ নিরসন প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার পর জুন মাসের শুরুতে দুই পক্ষের কমান্ডারদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়; যা আগে কখনোই হয়নি। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ভারত পরিস্থিতি নি’য়ন্ত্রণে বলে জানালেও সোমবার এ ঘটনা ঘটে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.