সিলেট বিভাগে মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে নারীসহ প্রাণ হারিয়েছেন নয় জন। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার মধ্যে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ১ জন ও বজ্রপাতে মারা গেছেন ৭ জন।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জ এমসি একাডেমির পাশে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক নারী নিহত হন।
নিহত রফিয়া বেগম (৬০) বিয়ানীবাজার উপজেলার ছরিয়া গ্রামের মজির উদ্দিনের স্ত্রী।
আরও পড়ুন:
সিলেটে জুমার নামাজের খুতবা দেওয়ার সময় ইমামের মৃত্যু
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, বাড়তে পারে দেশেও
বিষয়টি নিশ্চিত করে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের জানান, বড় মেয়ে তানজিনা আক্তারের বাসা থেকে ছোট মেয়ে হেলেন বেগমের বাসায় যাওয়ার জন্য তিনি সড়ক পার হচ্ছিলেন। এসময় একটি প্রাইভেটকার তাকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। কারের ধাক্কায় রফিয়া বেগম গুরুতর আহত হলে তাকে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সিলেটের সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বিশ্বনাথে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নে মাছ ধরতে গিয়ে আনসার আলী নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আনসার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কাটিমারা গ্রামের বাসিন্দা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
শাহপরান থানার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন, সকালে নিজ বাড়ির পাশে একটি পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান অনসার আলী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে রোববার সকাল ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর স্কুলের পাশের মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান মাসুক আহমেদ (৪১)। মাসুক উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে ভোরে সিলেটের বিশ্বনাথে বজ্রপাতে রেদওয়ান আহমদ (১৯) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সুফিয়ান আহমদ (১৬) নামে আরোও একজন। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের সাড়ইল গ্রাম সংলগ্ন ডুবির হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রেদওয়ান আহমদ সাড়ইল গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে ও সিলেট এমসি কলেজের বিএসএস ১ম বর্ষের ছাত্র।
বিশ্বনাথ থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রুবেল মিয়া জানান, গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে পুকুর সেচ করছিলেন কিছু যুবক। এ সময় বজ্রপাতে দুই জন আহত হন। পরে তাদের হাসপতালে নিওয়া হলে ডাক্তার রেদওয়ান আহমদ (১৯) মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সুনামগঞ্জে হাওরে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে ৪ জন এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ছাতকে একজন, দোয়ারাবাজারে দুজন ও জামালগঞ্জে একজন এবং বিশ্বম্ভরপুরে ১ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন।
জানা গেছে, জেলার ছাতক উপজেলায় সুন্দর আলী (৫০) নামে এক জেলে নিহত হয়েছেন। তিনি ছাতক উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের খুরশেদ আলীর ছেলে। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার বোয়া বিল হাওরে বজ্রপাতে তিনি নিহত হন।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওরে সকাল ৭ টার বৃষ্টির মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজন ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। নিহতদের বাড়ি উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামে।
নিহতরা হলেন- তিনহালি বাড়ির চাঁন মিয়ার ছোট ছেলে জলাল মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের নোয়া গাঁইয়া বাড়ির নুরুল হকের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন।
আরও পড়ুন:
ফরিদপুরে প্রতিমা ভাঙচুর, ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৮৭৫; শিক্ষার্থী ৫২ শতাংশ
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় শরীফ মিয়া (৩০) নামে একজন বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালাগুজা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।
জানা যায়, রাতে শরীফ কালাগুজার নয়া হাওরে মাছ ধরতে যান। সকালে পরিবারের লোকজন জানতে পারে, তিনি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। পরে পরিবারের লোকজন মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কামাল হোসেন এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের মতুরকান্দি গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে রাতের কোনো এক সময়ে বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
রোববার সকালে স্থানীয়রা ট্রান্সমিটার খুঁটির নিচে সরঞ্জামসহ তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। তবে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায় নি।
গ্রামের লোকজন ধারণা করছেন রাতের আধারে বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার চুরি করতে এসে তার বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয়েছে।