Sunday, July 6, 2025

Top 5 This Week

Related Posts

আসাম-মেঘালয়ে ভারী বর্ষণ, সিলেটে বন্যার শঙ্কা

সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত। সেই সাথে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি কয়েকদিন আগেরচে বেড়েছ কয়েকগুণ, যদিও মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার কিছুটা কমেছে। এ অবস্থায় পাল্লা দিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর আতঙ্কও।

বুধবার (২১ মে) সিলেটে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আর ২৪ ঘন্টায় এর পরিমাণ ১৯৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আরও কয়েকদিন ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে আবার সিলেটের উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও গত কয়েকদিন থেকে ভারী বৃষ্টি ঝরছে। সেখানকার গণমাধ্যমগুলো ঘেঁটে জানা গেছে, এমন বৃষ্টি আরও কয়েকদিন ঝরতে থাকবে।

সিলেট মহানগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতা সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। হাঁটা-চলাতো দায় হয়ই, এমনকি বাসস্থানেও তখন থাকা দায় হয়। সমস্যাটা অনেক পুরানো হলেও ২০২২ সালের বন্যার পর থেকে এই আতঙ্ক বেড়েছে সহস্রগুণ। সেবার বারংবার ডুবেছে সিলেট মহানগরী। এমনকি উপশহর ও সুবহানীঘাট পয়েন্টসহ আরও কিছু এলাকা দীর্ঘদিন ছিল পানির নিচে। সঙ্গে ছিল অবর্ননীয় দুর্ভোগ। এই দুর্যোগের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সিলেটের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি।

সিলেট মহানগরীর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি যখন বিপৎসীমা অতিক্রম করে তখন এই নগরীর অবস্থা হয় ভয়াবহ। কারণ, তখন আর পানি নামার জায়গা থাকেনা। এমনিতে পর্যান্ত ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকা, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন তৈরি ও নগরীর ছড়া বা খালগুলোর অধিকাংশই দখল হয়ে যাওয়ায় সিলেট মহানগরীর বৃষ্টির পানি নামতে দেরী হয়। তবে সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে তা হয় আরও ভয়াবহ। তখন পানি নামার বদলে হু হু করে প্রবেশ করতে শুরু করে। নাগরিক দুর্ভোগ তখন রূপ নেয় মহাদুর্ভোগে।

বুধবার সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ৮৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের পর সুরমার তীর রক্ষা বাঁধ বা শহররক্ষা বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। সেটা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আলাপ আলোচনা হলেও কাজে কাজ কিছু হয়নি। কেবল আলোচনাই হয়েছে।

আবার নিম্নাঞ্চলের পানি পাম্প দিয়ে সেচের একটি প্রকল্পের ব্যাপারেও সিসিক’র আলোচনা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছু আর হয়নি। আর তাই সিলেট মহানগরী বলতে গেলে অরক্ষিত। যে হারে বৃষ্টি চলছে বা আসাম মেঘালয় থেকে ঢল নামার যে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় নগরবাসীর জন্য মহাদুর্ভোগ নেমে আসতে পারে।

সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ হোসেন (৪৫) বলেন, ২০২২ এর পর এখন পর্যন্ত মানুষ আমাদের নিয়ে টিজ করে। পানি নেমেছে কি না জিজ্ঞেস করে মুচকি হাসে। আর তাই বর্ষা আসতে না আসতেই আমাদের উদ্বেগ আতঙ্কও বাড়তে থাকে। এবারও তাই। কখন যে ভারতের ঢল সুরমার তীর ডুবিয়ে আমাদের দুর্ভোগে ফেলে দিবে তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দিন দিন বাড়ছেতো বাড়ছেই।

সিলেট মহানগরীর নিম্নাঞ্চল উপশহর, সুবহানীঘাট, মাছিমপুর, শেখঘাট, কদমতলী, কুশিঘাট, মেন্দিবাগ, টেকনিক্যাল রোড সংলগ্ন এলাকার মানুষের দাবি, সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনকে এখনই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে ক্ষয়-ক্ষতি কম হবে।

এদিকে মঙ্গল ও বুধবারের বৃষ্টিতে সিলেট মহনগরীর পীরমহল্লা, দরগাহ গেইট, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, বঙ্গবীর রোড, ছড়ারপার এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এখনো বিপাকে রয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ ও পথচারীরা।

Popular Articles