Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিসিএস ক্যাডার পরিচয়ে ১২ বিয়ে করলেন তিনি







নাম তার শাহনুর রহমান সিক্ত। অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তিনি। বড় হয়েছেন বিপিএটিসির কোয়ার্টারে বড় হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তার হাতের নাগালে। ওই ক্যাম্পাসের আলো বাতাস তার সবই পরিচিত।

সিক্ত নামের ওই মেয়েটি নিজেকে পরিচয় দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। তিনি নাকি ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার। আর ওই পরিচয় দিয়ে তিনি ইতিমধ্যে একডজন বিয়ে করেছেন। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অথচ অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে যাওয়া কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর পড়াশোনা মাত্র ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত।



তার নামের সঙ্গে শাহনুর আকতার নামে একজন বিসিএস ক্যাডারের নামের মিল থাকায় তার পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন সিক্ত নামের এই নারী। আদতে তিনি একজন ভয়ংকর প্রতারক।

তিনি পরিচয় দিয়ে বেড়ান তার মা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিপিএটিসি’র ট্রেনিং ডিরেক্টর। ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিপিএটিসির ফিজিকাল ইন্সট্রাক্টার। বড়বোন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের প্রফেসর। দুলাভাই প্রকৌশলী, একমাত্র চাচা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং মামা একজন মন্ত্রী। আর তিনি নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৮ ব্যাচের ছাত্রী দাবি করেন।



এমন পরিচয় দিয়ে শাহনুর রহমান সিক্ত এক ডজন ব্যক্তিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছেন। এমনকি বিয়েও করেছেন। শুধু তাই নয় স্বামীর পরিচিত ব্যক্তিদের চাকরি দেয়ার প্রলোভন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ সিক্ত মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাবা বিপিএটিসি’র একজন গাড়িচালক ছিলেন। বাবার অকাল মৃত্যুর পর তার মা বিপিএটিসি’র আয়ার চাকরি পান।



সিক্ত তার মায়ের সঙ্গে সে বিপিএটিসি’র কর্মচারী কোয়ার্টারে বড় হয়েছে। বিসিএস ক্যাডারদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এখানেই হয়। এই সুযোগে সে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির পদ, পদমর্যাদাসহ বিভিন্ন বিষয় আয়ত্ব করে ফেলে। বিপিএটিসির কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণের বিভিন্ন বিষয় তিনি সহজেই আয়ত্ব করে ফেলে। ক্যাম্পাসের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরদের সম্পর্কেও অনেক তথ্য সে আয়ত্ব করে ফেলেন। এমনকি ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থীর মতোই সে পরিচিত হয়ে ওঠে। সে ফেসবুকে বিশ্বদ্যিালয়ের ৩/৪ হাজার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের রি-ইউনিয়নে সে অংশগ্রহন শুরু করে।



এদিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় পুলিশ গত ২ ফেব্রুয়ারি সিক্তকে গ্রেফতার করে। ওই মামলার বাদী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ওই নারীর কথিত স্বামী। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসছে এই নারীর ভয়ংকর সব প্রতারণার গল্প। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় এখন এই নারী কারাগারে আছেন।



শাহনুর রহমান সিক্ত ছাড়াও ওই নারী সিক্ত খন্দকার, তাহামিনা আক্তার পলি ও তামিমা আক্তার পলি বলে নিজের পরিচয় দিতো। ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার শাহনুর আক্তারের নামের সঙ্গে প্রতারক সিক্তর নামের মিল রয়েছে। এ কারণে সিক্ত বিসিএস ক্যাডার শাহনুরের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিচ্ছিলেন। এভাবে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীকে সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে বিয়ে করে। পরে স্বামীর আত্মীয় স্বজনদের চাকরি দেয়ার নাম করে সাত লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়। এক স্বজনকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির নাম করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকেও প্রেমের ফাদে ফেলে প্রথমে সে বিয়ে করে। পরে তার সবর্স্ব হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে।

জানা গেছে, ১০/১২ বছর ধরে একই ধরণের প্রতারণা করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থী ছাড়াও আরও অন্তত ১০ জনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে স্বর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। ১০/১২ বছর ধরে সে এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। তার পরিবারের সদস্যরা প্রতারণার কাজে তাকে সহায়তা করতো। একটি প্রতারণার মামলায় সিক্তর দুলাভাই আফতাব উদ্দিনকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের বলেন, একটি প্রতারণার মামলায় সিক্ত নামের ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে, সে একজন প্রতারক। মামলার তদন্ত এখনো চলছে। তার সম্পর্কে এরই মধ্যে অনেক তথ্য জানা গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.