Beanibazarview24.com
আমার সামনের এবং পাশের সিটে একটা ফ্যামেলি বসেছিল।শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ বেড়ে যায়।যার ফলে আমাদের বগিতে অনেক যাত্রী দাড়ানো অবস্থায় ছিলেন।
শ্রীমঙ্গল স্টেশন ছেড়ে ট্রেন যখন শায়েস্তাগঞ্জ আসে।তখন পাশের সিটের এই ভদ্রলোক চেয়ার ছেড়ে টয়লেটে যান।এবং এক মুরুব্বী উনার খালি চেয়ারে বসে পড়েন।
ভদ্রলোক টয়লেট থেকে এসে দেখেন উনার সিটে আরেকজন বসে আছেন,কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম উনি মুরুব্বী কে একবারের জন্য ও বলছেন না,
-উঠুন, সিট টি আমার!
ট্রেন চলছে আর ভদ্রলোক নিজের চেয়ারে আরেকজন কে বসতে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
উনার স্ত্রী উনাকে একবার বললেন,
– মুরুব্বী কে বলো এটা তোমার সিট। উঠে জায়গা দেয়ার জন্য!
ভদ্রলোক বললেন,
-মুরুব্বী মানুষ, এভাবে ঘুম থেকে জাগিয়ে উঠে যেতে বলতে লজ্জা লাগছে!
ঠিক এভাবেই এ ভদ্রলোক নিজের ক্রয় করা চেয়ার ছেড়ে দিয়ে সাড়ে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত সফর করলেন।
কুমিল্লা স্টেশনে মুরুব্বী নেমে গেলেন।
নেমে যাওয়ার সময় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেলেন ভদ্রলোকের ছেলের মাথায়।
ট্রেন আবারো চলছে।আর আমি তাকিয়ে আছি পাশের সিটে বসা একজন অসাধারণ মানুষের দিকে।
কৌতুহল মন নিয়ে উনার পরিচয় জানতে চাইলাম।
উনি উনার নাম বললেন,
-আহসান।কাজ করেন চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসাবে। পরিবার নিয়ে হযরত শাহজালাল রঃ মাজারে গিয়েছিলেন।
ট্রেন চলছে…
আমি ক্ষনে ক্ষনে আড় চোখে আহসান ভাইয়ের দিকে উঁকি মেরে দেখছি।কিছুক্ষন পর পর ট্রেনের ঝাকুনিতে উনার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলে মা’কে জিজ্ঞাসা করছেন
– মা কিছু খাবা? তোমার পান আছে?পান লাগবে?
আহসান ভাইয়ের মা জবাবে বলেন,
– বাবা তুই ও একটু ঘুমায়া নে। পৌছাতে এখনো অনেক দেরী।
আহসান ভাই হাসি দিয়ে মাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে নিজে জেগে থাকেন পরিবার কে দেখে রাখার জন্য। কিছু মানুষের জন্ম হয়েছে হয়তো মানবতা- সম্পর্ক এসব কিছুর গার্ড দেয়ার জন্যই। এরা জেগে থাকে বলেই হয়তো পৃথিবীতে মানবতা শব্দটি বেঁচে আছে।
-ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.