Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

পরবাসীরা প্রিয়জনের কথা ভেবে নীরবে কাঁদে…


প্রবাসীরা নীরবে কাঁদে, অঝোরে চোখের পানি ঝরায়। শত যন্ত্রণা সহ্য করে বিদেশেই পড়ে থাকে। তাদের এসব কষ্টের খবর প্রিয়জনের কাছে পৌঁছায় না। আপন মনে নিজের দুঃখ-কষ্টগুলোকে কবর দেয় তারা। নিজেদের সব বিসর্জন দিয়ে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে তারা। এমন করে কাটে দিনের পর দিন বছরের পর বছর। ঘরেও ফেরা হয় না তাদের। শতকরা হিসেব করলে এমন পরবাসীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে কাজের খোঁজে গেছেন তাদের অধিকাংশের অবস্থাই এমন। মাস শেষ হলে বেতন হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় সমস্ত খুশি বুঝি ফের তাদের আগলে ধরে। কিন্তু সেই বেতনের টাকা বেশিক্ষণ থাকে না নিজের কাছে।

নিজের চলার মতো কিছু রেখে বাকিটা যে পাঠাতে হয় পরিবারের কাছে। কেননা পরিবারের অন্য সদস্য আর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সেই বেতনের আশায় বসে থাকে।

বেতনের টাকা হাতে থাকে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন। তারা ভাবে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় টাকাটা পরিবার কিংবা বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছাতে। প্রিয়জনের মুখে হাসি আর পরিবারের অবলম্বন এসব প্রবাসীকে তাই নিজের সুখের কথা ভুলে যেতে হয়।

আমিরাত প্রবাসী আশরাফ আলী যেমন বলছিলেন, ‘বেতন পান মাসের শুরুতে। টাকাটা হাতে আসার পর সবার আগে বাড়ির কথা মনে পড়ে। তাইতো নিজের কথা চিন্তা না করে যত তাড়াতাড়ি পারি টাকাটা বাবার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেই। বেতন পাই মনে করি ৩০ হাজার। যা দিয়ে আমি আর দেশে আমার পরিবার কোনোরকম টেনেটুনে চলে।’

অবিবাহিত আশরাফ আলী আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে যখন শুনি আমি নাকি ৬০-৭০ হাজার টাকা বেতন পাই কিন্তু সবটা বাড়িতে দেই না। আমার বেতন নিয়ে গ্রামের মানুষ প্রশ্ন তোলে। তাদের ধারণা আমি বাকি টাকা অন্য বাজে কাজে খরচ করি। খুব কষ্টা পাই কিন্তু কিছু বলতে পারি না।’

সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের বিশ্বাস না থাকায় নিজের কষ্টের কথা জানান তিনি। বলেন, ‘সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। যে বাবা-মায়ের সন্তান প্রবাসে থাকে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা আপনাদের সন্তানকে বিশ্বাস করুন। প্রবাসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে যে সন্তান সে কখনো বাবা-মায়ের সঙ্গে মিথ্যা বলে না।’

নিজের হাজারো কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আশরাফ আলী বলেন, ‘দিনরাত পরিশ্রম করে আমরা যারা রোজগার করি তাদের কেউই বাজে কাজে টাকা খরচ করে না। আমার মতো যারা প্রবাসে থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিছু টাকা পাওয়ার আশায় শুধু তারাই আমার এ কষ্টের কথা বুঝবে। আমার মতো লাখো প্রবাসী নীরবে কাঁদে, নিজের কষ্টের কথা তারা কাউকে বলতে পারে না।’

প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন এবং প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালবিহীন কারাগারে এতিমের মতে বসবাস করা। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। নিজের দুঃখ নিজে অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয়। প্রবাসে যারা এসেছেন একমাত্র তারাই প্রবাসজীবন যে কেমন নির্দয় ও নির্মম তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

শস্য-শ্যামলা সবুজেঘেরা সোনার বাংলাদেশ এবং মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজের প্রিয় স্ত্রীর মায়া-মমতা ভালোবাসা ত্যাগ করে, সংসারের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, আর্থিক উন্নতির জন্যই প্রবাসের মাটিতে পা রাখতে হয়।

বিদেশে এসে চাকরি করে অনেক টাকা-পয়সা বাড়িতে পাঠাব। দুঃখের ছায়ার পরিবর্তে সুখের আলোতে সংসার উজ্জ্বল হবে। এ প্রত্যাশা বুকে নিয়ে আমরা প্রবাসে এসেছি। কিন্তু আমাদের সেই সুখ, সেই সুখের স্বপ্ন সবাই কি পূরণ করতে পেরেছি? না।

বেশির ভাগ প্রবাসীই তাদের আশা-আকাঙ্খা এবং তাদের যে উদ্দেশ্যে প্রবাসে আসা তা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয় না। কারও মালিক ঠিকমতো বেতন দিচ্ছে না, আবার কেউ দেশ থেকে যে বেতনের কথা শুনে এসেছিল, তারা দেখতে পেল সেই বেতনের সঙ্গে কোনো মিল নেই। আবার সঠিক বেতন পেলেও সে বেতন নিয়মিত নয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.