Tuesday, July 1, 2025

Top 5 This Week

Related Posts

নিজ গ্রামে শায়িত হলেন মনু মিয়া, তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়েছেন যিনি

পারিশ্রমিক ছাড়াই পাঁচ দশক ধরে মানুষের কবর খুঁড়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আগলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া (৬৭) শেষবারের মতো নিজেই পাড়ি জমালেন নাফেরার দেশে। আজ শনিবার (২৮ জুন ২০২৫) সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। শুধু গ্রাম নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনু মিয়াকে যারা চিনতেন, তারাও এই খবরে মর্মাহত।

সাধারণ একজন মানুষ হয়েও মনু মিয়া হয়ে উঠেছিলেন ব্যতিক্রমী মানবিকতার প্রতীক। জীবদ্দশায় বিনা পারিশ্রমিকে তিনি প্রায় ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন। যাদের কবর খুঁড়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর দিন-তারিখ নিজ হাতে একটি ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন। তার ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী, ১৬/১৭ বছর বয়স থেকেই এই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল ছিলেন না মনু মিয়া। নিজের সামান্য ধানি জমি আর জয়সিদ্ধি বাজারের তিনটি দোকানঘরের ভাড়ায় চলতো তার সংসার। নিঃসন্তান মনু মিয়া তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে নিয়ে ছিলেন পরিশ্রমী ও সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। জীবনের শেষ সময়ে ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ছয় দিন আগে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন।

কবর খুঁড়তে গিয়ে সময়মতো পৌঁছাতে নিজের জমি বিক্রি করে এক সময় একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। সেই ঘোড়াই ছিল তার যাত্রার সঙ্গী। কিন্তু দুর্বৃত্তরা অসুস্থ অবস্থায় থাকা অবস্থায় তার সেই ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এই খবর মনু মিয়াকে শুরুতে জানানো হয়নি। পরে তিনি নিজেই বিষয়টি জেনে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই তাকে সাহায্য করতে চাইলেও মনু মিয়া বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু সবার কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন, যেন আবারও মানুষের কবর খুঁড়তে পারেন।

মনু মিয়া বলতেন, “আমার কোনো সন্তান নেই, আমি যা করছি তা শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য। দুনিয়ায় আমার চাওয়ার কিছু নেই।”

লন্ডনপ্রবাসী কিশোরগঞ্জের সন্তান, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী ড. আনিছুর রহমান আনিছ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনু মিয়ার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে জানান, “এই মানুষটি ছিলেন নিঃস্বার্থ সেবার অনন্য প্রতীক। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন প্রকৃত খেদমতগার মানুষকে হারালাম।”

মনু মিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ দোয়া করছেন—এই নিঃস্বার্থ ও আল্লাহপ্রেমিক মানুষকে মহান আল্লাহ যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন।

Popular Articles