Beanibazarview24.com
শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডেই ঘটে গেল এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। প্রার্থনারত নিরীহ মুসলিমদের নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতেও এই ঘটনাকে ভয়ানক এক হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তেমন কেউই নৃশংস এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বা টেরর অ্যাটাকের তকমা দিচ্ছে না।
প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাকে বন্দুক হামলা হিসেবে অভিহিত করছে। হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকেও কেউ সন্ত্রাসী বলছে না। এর কারণটা কী? শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ এবং অমুসলিম বলেই কি সন্ত্রাসী তকমা থেকে মুক্ত ব্রেন্টন?
আধুনিক বিশ্বে ‘টেরর অ্যাটাক’, ‘সন্ত্রাসী হামলা’ কিংবা ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ড’- এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু এই শব্দগুলোর সংজ্ঞা আসলে কী? শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের কেউ হামলা চালালেই কী সেটা সন্ত্রাসী হামলা বা টেরর অ্যাটাক? আর শেতাঙ্গ কোনো উগ্রপন্থী হামলা চালালে সেটা শুধুমাত্র ‘গুলি বর্ষণ বা শুটিং’?
২০১১ এর জুলাইয়ে শ্বেতাঙ্গ নরওয়েজিয়ান অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নরওয়েতে আরেক বর্বর হামলা চালিয়েছিল। তিনি উটোয়া দ্বীপে নরওয়েজিয়ান লেবার পার্টির গ্রীষ্মকালীন তরুণ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণ করে ৭৭ জন নিরাপরাধ নাগরিককে হত্যা করেছিলেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কিশোর। নৃশংস হত্যাকারী ব্রেইভিকের গায়েও তখন সন্ত্রাসীর তকমা লাগেনি। তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা।
বর্তমানে নরওয়েতে ২১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছেন। তাকে মানসিক চিকিৎসার জন্য আসাইলামেও পাঠানো হয়েছিল। অথচ এই কাজটাই যদি কোনো স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি তরুণ করতো ভাবুন তো একটু তার কপালে কী জুটতো? কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ কিংবা নৃশংসভাবে বিচারহীন মৃত্যুদণ্ডই হয়তো মাথা পেতে বরণ করতে হতো তাকে।
মানুষ হত্যা বা সন্ত্রাসবাদ এটা কারোরই কাম্য নয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু এই শাস্তিটাই সবার জন্য সমান হওয়াটা জরুরি নয় কি? একজন শ্বেতাঙ্গ বলে তাকে স্রেফ বন্দুকধারী আর একজন মুসলিম বলে তাকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করাটাও কি এক ধরণের অপরাধ নয়?
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.