Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুলমৃত্যুর আগে মাথাগোঁজার ঠাঁই চান







ক’বছর পরেই জাতি উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মহান মুক্তিযুদ্ধের এতটি বছর পেরিয়ে গেলেও নিজের একটা বাড়ি-ঘরের স্বপ্ন আজো অপূর্ণই থেকে গেছে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের। একাত্তরে যেমন গৃহহীন অবস্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, আজো তেমনি গৃহহীন অবস্থায় জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে।

জন্ম তার কুমিল্লায়। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে আগেই সপরিবারে চলে এসেছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়নস্থ ইসলামপুর গ্রামে।



তার পিতার নাম মহররম আলী। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ইপিআরএ যোগ দিয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম (৬৭)। তবে ২৫ মার্চ কালোরাতের পরপরই তারা মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলেন বলে সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি জানান, ভারতের আসাম রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষে চট্টগ্রাম সীমান্ত এলাকায় গেরিলা হামলার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা কয়েকজন। বললেন, হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে পুরো নয় মাস যুদ্ধের ময়দানেই ছিলেন।

বিজয়ের পর দেশে ফিরে আসেন। ফিরে আসেন ইসলামপুরে মা-বাবার কোলে। বাড়ি ফিরে দেখেন তার বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও জন্মদাতাকে দেখতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাকে।



আক্ষেপ আরো আছে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছেন। দুঃস্থদের দিচ্ছেন ঘরবাড়িও। কিন্তু সিরাজুল ইসলামের ভাতা জোটলেও জুটছেনা বাড়ি। স্বাধীনতার আগের সময়ের মতো আজো তিনি পরাশ্রয়েই আছেন।

হাওরের তীরে গ্রামের মেঠো পথধরে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় সিরাজুল ইসলামের সাথে। জানালেন, ৬ সন্তানের জনক তিনি। সংসারে আছেন স্ত্রী আর দুই অবিবাহিত মেয়ে।

দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন, আজো আমি ঘরবাড়িহীন একজন মানুষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি জীবন বাজি রেখে। কিন্তু নিজের জীবন যুদ্ধ চালাতে আজ আর পারছিনা।

সিরাজুল জানালেন, একসয় তার মাছের ব্যবসা ছিল। এখন তাও নেই। সরকারী ভাতা পাচ্ছেন তবে অসুস্থতার কারণে তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। সিংহভাগ টাকাই চলে যায় ওষুধ জোগাড় করতে।



বললেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জমি দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিবেন বলে আশ্বাস দিলেন। আমরাও নতুন আশায় বুক বাঁধলাম। দুইবছর আগে তালিকায় নাম দেওয়া হলেও আজো তা পাইনি। কবে পাবো তাও অজানা।

১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম দিকে ইস্ট ব্যাঙ্গল রেজিমেন্ট (ইপিআর), চট্টগ্রাম বান্দরবানে পাহাড়িদের পুণর্বাসনের কাজ করছিলেন তারা। বয়স তখন ২১/২২ বছর। ২৬ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনী ধ্বংসলীলা চালানোর পর শেষ রাতের দিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হায়েনাদের উপর প্রথম হামলা করেছিলেন তারা।



এরপর সশস্ত্র অবস্থায় যোগদান করেন মুক্তিযুদ্ধে এবং ট্রেনিং গ্রহন করেন ভারতের শিলচরের লিচুবাগান এলাকায়। প্রায় ১৫ দিনের ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে অংশগ্রহন করেন সম্মুখ যুদ্ধে। যুদ্ধজীবনের উল্লেখ্য অপারেশনগুলোর মধ্যে স্মরণ করেন পাঠিয়া (রঙ্গুনিয়া ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল) হামলা, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার কথা।

যুদ্ধের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে আজো কাঁদে সিরাজুল ইসলামের অন্তর। প্রাণের বন্ধু ফজলুর কথা মনে পড়ে গভীর নিশীতে ঘুমহীন বিছানায় ছটফট করতে করতে। রাতে আঁধারে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার সময় তার এই প্রিয় বন্ধুটি শাহাদাত বরণ করেছিলেন।



বয়স ৬৭ হলেও অসুস্থ শরীরের কারনে সিরাজুল ইসলামকে অশিতিপর বৃদ্ধ বলেই মনে হয়।
বললেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যার কাছে আমার একটাই চাওয়া, মৃত্যুর আগে আমার ছেলে মেয়েদের জন্য যেনো মাথাগোঁজার জায়গা হয়েছে বলে দেখে যেতে পারি।
সূত্রঃ সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.