মাত্র ২১ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন সিলেটের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপঙ্কর দীপ। বুধবার ভোরে মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
দীপের মৃত্যুতে শোকাভিভূত পুরো সিলেট। দীপের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউই। এমন হাশিখুশি-উচ্ছল তরুণের অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক করা নিয়েও বিস্মিত সবাই।
সাধারণত বয়স্কদের হার্ট অ্যাটাক হয়। একটা সময় এমনটি ভাবা হত। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন তরুণ বয়সেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এ কারণে প্রাণ হারানোর সংখ্যাও কম নয়। তাই শুধু বয়স্করা নয়, হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে অল্প বয়সীদেরও।
অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। ইদানীং হার্টের সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অনেকেই কমবয়সি। জিনগত কারণে বা জন্মগত ভাবে হার্টের অসুখ রয়েছে এমন মানুষ ছাড়া যাদের পরে কোনও কারণে হার্টের অসুখ ধরছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ২০-৪০-এর মধ্যের তরুণ-তরুণীরা।
হার্ট অ্যাটাক যে কারণে হয়
কোনো কারণে আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল ঠিকমতো না হলে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। আমাদের হৃৎপিণ্ডে যখন রক্ত ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না, তখন শিরায় চাপ পড়ে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।
জীবনযাপনে অনিয়ম
মানুষের বেশিরভাগ অসুখের কারণ হলো জীবনযাপনের বিভিন্ন অনিয়ম। বর্তমানে বাইরের খাবার বেশি খাওয়া, রাতে দীর্ঘ সময় জেগে থাকাসহ নানা অনিয়ম করে থাকে তরুণরা। জীবনযাপনের এসব বদভ্যাসের প্রভাব পড়ে শরীরে। বর্তমানে বিভিন্ন দিকে খেয়াল দিতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখার কথা ভুলে যান বেশিরভাগই। যে কারণে ধীরে ধীরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
স্থূলতা
সঠিক খাদ্যাভ্যাস পারে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থতায় সাহায্য করতে। কিন্তু বর্তমানে ভুলভাল খাদ্যাভ্যাসের কারণে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন অনেকে। শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাক, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, ট্রিপল ভেসেল ডিজিজ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। যে কারণে বাড়ে বিপদ।
উত্তেজনা
অনেকে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা পাত্তা দিতে চান না, সেখানে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার কথা অনেকে চিন্তাও করতে চান না। এদিকে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে মারাত্মক সব রোগের কারণ। বর্তমানে তরুণরা পড়াশোনা, চাকরি, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় থাকে। এই কারণেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
মানসিক চাপ
অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্থূলতা
হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি বড় কারণ ওবেসিটি বা স্থূলতা। অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি জমা বা কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াসহ অনেক ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে।
অপর্যাপ্ত ঘুম
দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
অলস জীবনযাপন
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে হার্টের কাজ করার ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তের চর্বির পরিমাণও কমে। অলস জীবন যাপন করলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অস্বাস্থ্যকর খাবার
এখন অল্প বয়সীদের মধ্যে ঘরের বাইরে বা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার প্রবণতা বেশি। বাইরের খাবারে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি থাকে। এ খাবারগুলোর কারণে রক্তনালিতে চর্বি জমাট বাঁধাসহ হার্টের ক্ষতি হতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল
অনেকে না বুঝেই সিগারেট এবং অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আসক্তি একবার পেয়ে বসলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু সিগারেট এবং অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ ধরনের অভ্যাস সরাসরি ধমনীতে প্রভাব ফেলে। হৃৎপিণ্ড দ্রুত পাম্প করার কারণে এটি পরিণত হয় আক্রমণে।
বংশগত কারণ
পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। তাই রোগীর পারিবারিক ইতিহাস জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবা, বড় ভাই বা চাচাদের কেউ হার্টের অসুখে ভুগলে এর কারণ জানতে হবে এবং বংশগত কিছু আছে কি না দেখতে হবে।



