Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ইতালির বদলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ভেসে গেলেন বড়লেখার ’ফাহাদ’







অনেক স্বপ্ন নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়েছিলেন ফাহাদ। ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যাত্রাপথে ওত পেতে আছে মৃত্যু। তবে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাওয়া হয়নি ফাহাদের। ইতালির বদলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ভেসে গেছেন ফাহাদ। এতে লীন হয়ে গেছে তার স্বপ্ন।

ফাহাদ আহমদ (১৮)। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাজিটেকা পূর্বের চক এলাকার দুবাইপ্রবাসী আব্দুল আহাদের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফাহাদ সবার বড় ছিলেন।



লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে নিহতদের নামের তালিকা সোমবার (১৪ মে) প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট। এই তালিকায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার ফাহাদের নামও রয়েছে। এরপরই পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন নৌকাডুবিতে ফাহাদ মারা গেছেন। তবে মারা গেছেন কি না পরিবার এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি।
এদিকে ফাহাদের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পুরো পরিবার। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায়ও নেমেছে শোকের ছায়া।



বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গল্লাসাংগন (নিশ্চিন্তপুর) গ্রামে ফাহাদের নানা বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা আয়েশা আক্তার ও মামা সাব্বির আহমদের সাথে। ফাহাদের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়ায় আয়েশাকে তার বাবার বাড়ির লোকজন স্বামী বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি গল্লাসাংগন (নিশ্চিন্তপুর) গ্রামে নিয়ে এসেছেন।

ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের লোকজন পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে আসছেন।

ফাহাদের মা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ফাহাদের সাথে তাঁর শেষ কথা হয়েছে গত ৮ মে রাত আটটায়। ফাহাদ বলেছে, ‘মাইগো, আমি যাইরামগি (চলে যাচ্ছি)। আমারে যে টেখা (টাকা) দিছো একটাও আমি খাইছি না। ওরা সব নিয়ে গেছে। কোনো কিছু খাইতে দেয়নি। অনেক নির্যাতন করেছে আমারে। রাইত (রাত) একটায় তার মামারে লিখছে মামা আমি বোটে। আর কোনো যোগাযোগ নাই। আমার পোয়ার (ছেলের) কুনু (কোনো) খবর নাই। অনেকে অনেক রকম খবর আনিয়া দিরা। আমি শান্তি পাইরাম না।’



আয়েশা আক্তার আরও বলেন, ‘আমি কিতা করতাম (কি করবো)। আমি চাইছলাম না (চাইনি) পোয়ারে পাঠাইতে। নৌকা ডুবি যায়। পোয়ারে এমনভাবে উসকাইছে নাসিরে। পোয়া পাও ধরি কইছে কাঠের শিপে নিব, কিচ্ছু অইতো (হবে) নায়। রাজি অই যাও। অখন আমার বাইচ্চা আছে কিনা কুনতা জানি না। জামাইও বেমার (স্বামী অসুস্থ)। তিনটা বাইচ্চা নিয়া বাড়ি ছাড়িয়া রোডও। না খাইলাম পানি, না খাইলাম দানা। অনাহারে জীবন কাটাইরাম (কাটাচ্ছি)। অন্যের কাছে বাড়ি বন্ধক দিয়া টাকা নিছি। মনে করছি ছেলে ইটালি পৌঁছালে আমাদের দিন ফিরতে পারে। বন্ধকের টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরাতে পারব। এখন সব শেষ আমার।’



ফাহাদের স্বজনরা জানান, বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোয়ালি এলাকার তাদের এক পরিচিত নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ইটালির পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা চাইছিলেন না সাগর পাড়ি দিয়ে তাদের ছেলে ইটালি যাবে। কিন্তু নাসির উদ্দিন কিভাবে ফাহাদকে পটিয়ে ফেলে। নাসির বলেছিলেন, কোনো সমস্যা হবে না। ওকে জাহাজে পাঠানো হবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। ফাহাদ অনেকটা জোর করেই মাকে বাধ্য করে। তখন আট লাখ টাকায় চুক্তি হয়। মায়ের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা ছিল। বাকিটা অনেকের কাছ থেকে ধারদেনা করে জোগার করেন। ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর ফাহাদ ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দুবাই, তুর্কি হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান। লিবিয়াতে পৌঁছার পর তিন মাস পরে একবার সাগরপথে লিবিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছিল।



সেবার ধরা পড়ে যায়। এরপর লিবিয়াতেই ছিলেন এতদিন। ধরা খাওয়ার পর তাঁকে দেশে ফেরত আনার জন্য নাসির উদ্দিনকে চাপ দেওয়া হয়। নাসির উদ্দিন তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর কিছুদিন পরপরই ভিডিও কলে ফাহাদের দিকে বন্দুক ধরে আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকা চাওয়া হয়। সন্তানের মায়ায় মা আয়েশা আক্তার প্রতিবেশীর কাছে বাড়ি বন্ধক দেন। একে একে ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। টাকা নেওয়ার পরও এতদিন ছেলের ওপর নির্যাতন চলেছে। খাবারের টাকা দিয়েছি। কিন্তু ওরা খাবার দেয়নি। অল্প খাবার দিত। গোসলের জন্য পানি দিত না। দুই তিনদিন পর পর পানি দিত। গোসলের জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল না।

ফাহাদের মামা সাব্বির আহমদ বলেন, ‘আমার ভাগনা খুব সরল সোজা। তারে খুব বেশি উসকানি দিত নাসির। ১০ দিনের মধ্যে ইটালি পৌছে দিব। এমনটা বলেছে। প্রথমে আট লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে কয়েকবার বন্দুক ধরে ভিডিও কল করে বলে, টাকা পাঠাও। ধারদেনা আর বাড়ি বন্ধক দিয়ে ১৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন টেলিভিশনে নিউজ দেখছি। কিন্তু এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। এখন ছেলেও গেল। বাড়িও গেল।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘ফাহাদ নামে একজনের মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। তাঁর বাড়িতে যাব।’

প্রসঙ্গত, ইতালিতে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় বড়লেখা উপজেলার জুয়েল আহমদ (২৩) নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। এতে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন স্বজনরা। জুয়েল বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিন বছরের ছেলে। জুয়েলের পরিবার জানিয়েছে, ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে জুয়েলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের ধারণা, ওই নৌকাটিতে জুয়েলও ছিলেন।
– সিলেটভিউ২৪ডটকম














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.