সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়েটি তার স্বামীর বাড়িতে ও ছেলেটি প্রবাসে একই সময়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে স্বজনরা জানায়।
একই কবরে দাফনের ইচ্ছের কথা চিরকুট লিখে সদ্য বিয়ে করা তরুণী স্বামীর বাড়িতে, প্রবাসে তরুণের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার রাত ১১টার দিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়া গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে থানার ওসি মো. শাহ আলম জানান। পাশে একটি চিরকুটও পায় তারা।
অন্যদিকে, একই সময়ে ওমান প্রবাসী ২২ বছর বয়সি তরুণ সাফায়েত হোসেন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার বাবা জানান।
সাফায়েত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
আরও পড়ুন:
- ভিনগ্রহীদের সন্ধান মিলেছে, তবে তারা মানুষ নয়!
- ধার্মিক ছেলে পেলে অভিনয় ছেড়ে সংসারে মন দেবেন প্রিয়াঙ্কা
- এই প্রথম গাড়ির গিয়ার এলো মোটরসাইকেলে
- ৩১ বছর পর দেশে ফিরছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধা আবু বকর
- স্থায়ী হওয়ার আশায় কানাডায় পাড়ি দিয়ে হতাশায় ডুবছেন বাংলাদেশিরা
তবে ঘটনা দুটির কথা জানাজানি হয় রোববার।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ১৬ বছর বয়সি খাদিজা আক্তার ওরফে উর্মি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে।
সে স্থানীয় চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
গত ১৪ অক্টোবর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া কৃষ্ণপুর গ্রামের রং মিস্ত্রী আরিফুর রহমানের সঙ্গে ‘জোর করে’ বাল্যবিয়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানায়।
তারা জানায়, প্রশাসনের ভয়ে ওইদিন ঘরোয়াভাবে গোপনে মেয়েটির বিয়ের আয়োজন হয়েছিল।
পুলিশের উদ্ধার করা ঊর্মির চিরকুটে লেখ ছিল, “চাইছিলাম দুইজনে একসাথে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি, ও আমার প্রথম সাথী। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গায় আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবোও না। তোমরা সুখে থেক। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সাথে নিয়ে গেলাম।
“আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা, ভাই বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু থাকতে দেয় নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসাথে হয়। একদিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে।”
অন্যদিকে, প্রবাসী সাফায়াত আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটের কথা জানান তার বাবা আবদুল খালেক।
সাফায়েত তার চিঠিতে লিখেছেন, “শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সব কিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সবকিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপসনে আর গ্যালারিতে সব আছে। গ্যালারিতে আমার ৮টা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপসানে ডুকবেন আর ইমুতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনোদিন ক্ষমা করবো না।”
রোববার বিকালে খাদিজার মা নুরুন্নাহার বলেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়েত নামের একজন প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। গত ১৪ অক্টোবর সম্মতি নিয়েই আমাদের আত্মীয় বেতুয়ার আরিফুর রহমানের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল।
“শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি উর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়েত ভিডিও কলে একসাথে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছিল।”
প্রবাসী সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, “একবছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার ছেলের সাথে ঊর্মি নামে এক মেয়ের পরিচয় ছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে চিরকুট লিখে আমার ছেলেকে ভিডিও কলে রেখে দুজনই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি।”
কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, “আমার ছেলেসহ দুটি জীবনের আলো নিভে গেছে। তিনটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য আমি মেয়ের বাল্যবিয়েকে দায়ি করি। বাল্যবিয়ের সাথে জড়িত নিকাহ রেজিষ্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলের চিরকুট হাতে পেয়েছি। আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে মামলা করব। তাছাড়া মৃত্যুর আগে আমার ছেলের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেয়ের মা।”
রোববার বিকালে লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, “বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি, প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে।”
শনিবার রাত ১১টার দিকে নববধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে রোববার ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মেয়েটির লাশের পাশে হাতে লেখা চিরকুট পাওয়ার কথা জানিয়ে ওসি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশে এটি লিখেছিল।
মেয়েটির ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।