Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটে আতংক ছড়িয়ে প্রতারণা, সাবধান!







এমসি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন। ক’দিন আগে ক্লাস সেরে অফিসে বসতে না বসতেই বেজে উঠল তার মোবাইল ফোন। অপরপ্রান্ত থেকে দ্রুত একটি পুরুষ কন্ঠ একনাগাড়ে বলে গেল, আপনার শিশু সন্তানকে তার স্কুলের সামনা থেকে আমরা অপহরণ করেছি। দ্রুত এই নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠান। নইলে তাকে খুন করা হবে। দেরি করলে বা কোনধরনের চালাকি করলে ছেলেকে চিরকালের জন্য হারাতে হবে। বলেই লাইনটা কেটে দিল। অত্যন্ত নিষ্ঠুর কথাবার্তায় হতভম্ব হয়ে পড়লেন প্রফেসর শাহাব উদ্দিন।



তিনি আবারও কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে মোবাইলটি ব্যস্ত পেলেন। আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। কল্পচোখে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত নিজের একমাত্র সন্তানের অসহায় মুখটা দেখতে দেখতে দ্রুত ছুটলেন একটি দোকানে। রকেট নম্বরে পাঠিয়ে দিলেন সাথে থাকা ১৫ হাজার টাকা। আবার কলদিলেন ঐ নম্বরে। এবার রিং হলেও রিসিভ হলোনা। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলেন, কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করলোনা।



অধ্যাপক এবার নিজের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ঘটনা বললেন। তিনি বাচ্চাটির স্কুলে ফোন করলে কর্তৃপক্ষ জানালেন, ছেলেটি ক্লাসেই আছে এবং ভালো আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চলে এলেন স্কুলে। তাকে ক্লাস থেকে ডেকে আনলেন। দেখলেন সেরকম কিছু ঘটেনি। সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। অপহৃত হওয়া দুরে থাক, স্কুলে আসার পর সে একবার সীমানার বাইরেও যায়নি বলে তাদের অবগত করলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তারা। তবে ইতিমধ্যে প্রতারক চক্র সফল। তারা হাতিয়ে নিলো প্রফেসরের ১৫ হাজার টাকা।



সিলেট মহানগরীতে নতুন ধরণের প্রতারণার এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কখনো মা, কখনোবা বাবাকে টার্গেট করে প্রতারকরা। তারপর ফোনে এমনভাবে কথা বলে ব্যতিব্যস্ত করে যে, বিকল্প কিছু চিন্তা করার সুযোগই থাকেনা অভিভাবকদের সামনে। তারা টাকা দিয়ে দেওয়াটাকেই নিরাপদ মনে করছেন এবং দিচ্ছেন। পরে দেখাযায়, বাচ্চাটি স্বাভাবিক আছে। সেরকম কিছু ঘটেনি। নানা কারণে ভূক্তভোগিরা আইনের আশ্রয় নিতেও চাননা।



অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। রকেটের ঐ নম্বরটিসহ তিনি এসএমপির হযরত শাহপরাণ (র.) থানায় জিডি করেছেন। তবে প্রতারক চক্রের কোন হদিস বা এ ব্যাপারে বিশেষ কোন তথ্য এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

একই ধরনের একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন নগরীর মির্জাজাঙ্গাল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি। উটকো ঝামেলা এড়াতে তারা প্রথমে বিষয়টি স্বীকারই করতে চাননি। পরে পরিচয় প্রকাশ হবেনা, এমন আশ্বাস দিলে তারা জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া তাদের মেয়েটিকে টিফিনের সময় তুলে নেওয়া হয়েছে বলে একটি নম্বর থেকে জানানো হলো। সাথে সাথে ১০ হাজার টাকা বিকাশ না করলে মেয়েটিকে আর ফেরত পাওয়া যাবেনা এমন ভয় দেখানো হলো। তারা অসহায় বোধ করলেন। পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো বলে মনে হলো। তাৎক্ষণিক ৪ হাজার টাকা ঐ নম্বরে বিকাশ করলেন। এরপর স্কুলে গিয়ে দেখেন মেয়েটি ক্লাসেই আছে এবং সে স্বাভাবিক।



এই প্রতারকক্রটি কিন্তু টার্গেট করছে দুর্বল চিত্তের দম্পতিদের। লক্ষণীয়, উল্লিখিত দুটি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট দম্পতিদের কিন্তু সন্তান একটি করে। একমাত্র সন্তান হারানোর ভয় দেখিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে টাকায় আদায় সহজ, এমন চিন্তাভাবনা থেকেই তাদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং প্রতারকরা সফল ও হচ্ছে।

এরকম অবস্থায় পড়া অভিভাবকদের শক্ত মনে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন আইনশৃঙখলা বাহিনীর সাথে জড়িতরা।



এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসার পরামর্শ, অভিভাবকদের শক্ত হতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরতে হবে। এরপর দ্রুত পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। নিজের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে আলাপ-আলোচনায় একটা না একটা উপায় বের হবেই। পুলিশ কন্ট্রোল রুম বা যেকোন থানায় যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।



তিনি আরও বলেন, তাছাড়া যে নম্বর থেকে কল এসেছে ঐ নম্বরটি নিজে সেইভ করলেই হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার বা ইমোতে মোবাইল মালিকের ছবি চলে আসবে। এতেও অভিভাবকরা নম্বরটির মালিকানা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেতে পারেন। তবে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করাটাকেই তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সূত্রঃ সিলেটভিউ২৪ডটকম








You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.