চাকরির বাকি আর মাত্র দু’বছর দশ মাস। এরইমধ্যে পুলিশের পোশাকে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৩৭টি বসন্ত। তবে পালক ঝরে পড়ার আগে ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে উঠেছেন বগুড়ার ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল আব্দুস সামাদ। ৫৭ বছর বয়সে তিনি কারিগরি শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন৷
রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে পুলিশ সদস্য আব্দুস সামাদের এ সাফল্যের খবর জানা যায়।
পুলিশ কনস্টেবল সামাদ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে বগুড়া সদর ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত আছেন।
সামাদ দুই বছর আগে নাটোরের লালপুরের মোহরকয়া নতুনপাড়া মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এ বছর ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমনা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছেন।
পুলিশ কনস্টেবল সামাদ জানান, দুই মাস আগে বগুড়া পুলিশে যোগদান করেন তিনি। এর আগে পাবনার ঈশ্বরদীর ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় ঈশ্বরদী থেকে বিদ্যালয়টি কাছে হওয়ার সুবাদে নাটোরের লালপুরের একটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন। তবে পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়ার আগেই বগুড়ায় বদলি হয় তার।
তিনি জানান, ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর পুলিশ বিভাগে চাকরি পান। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান সামাদের আরও দুই ভাই ও এক বোন আছেন। তাই পরিবারের হাল ধরতে সেই সময় অষ্টম শ্রেণি পাস করেই তিনি পুলিশে যোগদান করেন। পরে কর্মস্থলের ব্যস্ততায় আর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি৷ তবে চাকরির শেষ সময়ে এসে স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফলাফলে বাজিমাত করেন সামাদ৷
আব্দুস সামাদ বলেন, এরইমধ্যে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসাশাস্ত্র তিনি পড়াশোনার মাধ্যমে আয়ত্ত করেছেন। তাই বগুড়া হোমিও কলেজে ডিপ্লোমা ভর্তি হয়ে অবসরের পর শেষ জীবনের শেষ সময়টুকু সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে কাটিয়ে দিতে চান৷
আব্দুস সামাদের এসএসসি পাসের খবর জানার পর তার কর্মস্থল ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার তাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়ে মিষ্টিমুখ করান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে সদস্যদের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবসময় ইতিবাচক সহযোগিতা করা হয়। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাদের ৫৭ বছর বয়সে এসে এসএসসি পাস সমাজের সবশ্রেণি পেশার মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। মানুষ চাইলে সব সাধন করতে পারেন, সামাদ তারই প্রতিফলন দেখিয়েছেন।