শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও সহিংসতার গুজব ছড়াচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজগুলো। গুজবগুলোর ফ্যাক্ট চেক করছে ডয়েচে ভেলে, দ্য কুইন্ট, দ্য নিউ মিনিট, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম। তারা বলছে, পুরোনো বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে এসব গুজব। এমনকি, হিন্দু মহাজোটের নেতাও গুজব ছড়াতে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোকে দায়ী করেছেন।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) জানায়, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও সহিংসতার গুজব ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরানো ছবি। ‘ফ্যাক্ট চেক-ফলস ক্লেইম ফুয়েল এথনিক ক্লিনসিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে তারা দেখিয়েছে, ভারতীয় অনেক গণমাধ্যম এবং ফেসবুক, টুইটার, এক্স প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব ও টিকটকে পুরোনো ছবি ও ভিডিও দিয়ে এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
ডয়চে ভেলে জানায়, হিন্দুদের ওপর হামলার পুরোনো ছবি ও ভিডিও নতুন করে আপলোড দিয়ে বলা হচ্ছে এগুলো চলমান সহিংসতার চিত্র। উদারহরণ হিসেবে তারা ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে হামলার মিথ্যা ছবি প্রচারের কথা তুলে ধরে। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার বাড়িতে আগুনের ছবি হিন্দু বাড়িঘরে হামলার ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
এ ছাড়া কিছু ধর্ষণের ভিডিও ও ছবির ফ্যাক্ট চেক করে তারা জানায়, সেগুলো ভারতীয় পুরোনো ভিডিও। এমনকি, শেখ হাসিনার বাসভবন বা গণভবন ধ্বংসের যেসব তথ্য ও ছবি প্রচার করা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত ও অসত্য বলে জানায় ডয়চে ভেলে।
এদিকে, মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টও বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
খবরে বলা হয়, শিক্ষার্থী-জনতা সহিংসতা প্রতিরোধে পাহারা বসিয়েছেন। একইসঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোও নেতাকর্মীদের কঠিন বার্তা দিয়েছে।
দ্য নিউ মিনিট জানায়, ২০২১ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে সংঘটিত ধর্ষণের ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বাংলাদেশের সহিংসতার চিত্র হিসেবে তুলে ধরেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
দ্য কুইন্ট বলেছে, ভারতের কর্ণাটকে ধর্ষণের শিকার বাংলাদেশির পুরোনো ভিডিও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলে দাবি জানিয়ে নতুন করে আপলোড করা হচ্ছে। সহিংসতা ও ধর্ষণের ছবি এবং ভিডিওগুলো নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং হিন্দুস্তান টাইমস থেকে নেওয়া হয়েছে বলেও জানায় তারা।
গুজব ছড়াতে ফেসবুক ও টুইটার বা এক্স প্ল্যাটফর্মে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও পরিসংখ্যান দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
অন্যদিকে, গত বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিকের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও তিনি গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। গুজব না ছড়াতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।