কথা বলছে বিয়ানীবাজারের দেয়ালগুলো! দেয়াললিখন বা গ্রাফিতির মাধ্যমে রঙতুলির আঁচড়ে বদলে গেছে এই জনপদের দেয়ালগুলোর চিত্র। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো বিয়ানীবাজারেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর এবার সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীরা হাতে নিয়েছে রঙতুলি।
যেসব দেয়ালে এতদিন ছিল রাজনৈতিক ব্যানার পোস্টার কিংবা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন অথবা শেওলা ময়লা জমে ছিল সে দেয়ালগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে ইতিহাস ও সাহসিকতার বিপ্লবের নানা স্লোগান। দেয়াললিখন, গ্রাফিতি অঙ্কন, চিত্র অঙ্কনসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ ফুটিয়ে তুলছেন উদ্যমি প্রতিবাদ, কেউ-বা আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিত্র কিংবা নানা বীরত্বগাথা তুলে ধরছেন।
সরেজমিনে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কলেজ রোড, সরকারি কলেজের দেয়াল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খালি দেয়ালে অঙ্কনের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। স্ব-উদ্যোগে অঙ্কনে ব্যস্ত সময় পার করছে সবাই।
তাদের লেখায় ফুটে উঠেছে ‘রির্ফম বিয়ানীবাজার, উই স্ট্যান্ড উইথ প্যালেস্টান, জেন-জেড, স্বাধীনতার সূর্যোাদয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চিত্র।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশ স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছি, এবার দেশকে সংস্কার করব। দেয়ালে লিখন কর্মসূচি চলছে, যাতে আগামীর প্রজন্ম ২৪-এর যোদ্ধাদের অবদান দেখেই স্মরণ করতে পারে। আনন্দসহকারে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এ কাজ করছেন। এতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহযোগিতা করছে বলে জানায় তারা।
মাহতাব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ৫২ দেখিনি, ৭১ দেখিনি, তবে দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে আমরা সেসব বীরত্বের সম্পর্কে জানতে পেরেছি। গত দুই মাসে ছাত্র আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতন এ সময়টা তরুণ প্রজন্ম পার করেছে। সে বিষয়গুলো দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি নোংরা শেওলাযুক্ত দেয়ালগুলোর সংস্কার কাজ হয়ে গেল।
আরেক শিক্ষার্থী ইমন আরাফাত বলেন, আমাদের এ প্রজন্মকে অনেকে বলে থাকে, মোবাইলে আসক্তির প্রজন্ম। অথচ এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সফল করেছে বর্তমান প্রজন্ম। অনলাইন যোদ্ধা হয়েও অনেকে কাজ করেছে। সে অবদানগুলো দেয়ালে তুলে ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে কেউ কেউ আরবি ক্যালিওগ্রাফি করছেন আলিয়া মাদ্রাসার বিপরীতে দেয়ালগুলোতে। সেখানে আরবিতে বিভিন্ন লেখা ও দেশাত্মবোধক বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের এমন কাজের প্রশংসা করছেন সকলে, শিশুদের দেখাতে অভিভাবকরাও ভিড় করছেন। তারা বলছেন, আমাদের বাচ্চারা কতটা সাহসী তা তারা দেখিয়ে দিয়েছে। এখন তারা শহরকে সুন্দর করে তুলছে। আগামী প্রজন্ম এসব স্মৃতি মনে রাখবে।
করিম উদ্দিন নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, কিছুদিন আগে দেখলাম তারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে। শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছে। এখন তারা দেয়াললিখন কর্মসূচি পালন করছে। এভাবে সর্বত্র সচেতনভাবে সবাই এগিয়ে এলে দেশটা আসলেই সুন্দর হবে। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক মেধাবী। তাদের জন্য দোয়া করি।