গত সপ্তাহে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। সে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রেখেছেন সাকিব আল হাসান। অথচ, এর আগেই একটি হত্যা মামলায় নাম উঠেছে তাঁর।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় এক গার্মেন্টস শ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় রাজধানীর আদাবর থানায় সাকিবের নামে একটি মামলা হয়। এরপর সাকিবকে জাতীয় দল থেকে অপসারণ করে তদন্তের স্বার্থে দেশে ফেরাতে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
বোর্ডের পক্ষ থেকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দলের সঙ্গেই থাকবেন সাকিব। খেলবেন পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও। সিরিজ শেষে সেখান থেকে কাউন্টি খেলতে যাবেন ইংল্যান্ডে। পরবর্তী সিরিজ খেলতে সেখান থেকেই দলের সঙ্গে ভারতে যোগ দেবেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
এরপরও সাকিবকে নিয়ে জল্পনা থামছে না। অনেকের মনেই প্রশ্ন, দেশে ফিরলে সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা। আজ বুধবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার কাছেও সাকিব ইস্যুতে প্রশ্ন গেলে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, সাকিবের বিরুদ্ধে কেবল মামলা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, সাকিব গ্রেপ্তার হবেন না।
সাকিবের ইস্যুতে উত্তর দিতে গিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন আইন উপদেষ্টা। গত বছর পুলিশকে আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ চালানো ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার।
সেটি মনে করিয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এটা (মামলা) তো আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। ঠিক না? আমিনুল যিনি ফুটবলার… সাকিব তো আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু আনেনি। সাকিব নিজে অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমিনুল তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল। এনেছিল না? জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন? আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে (এখনো) শুধু মামলা হয়েছে।’
আমিনুলকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, ভবিষ্যতে সাকিবকেও তেমন কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হবে কিনা, সে সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এটা পুলিশ-প্রশাসনের ব্যাপার। তারপরেও আমরা যতটুকু বলার দরকার, বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া বা এফআইআর হওয়া মানে তো গ্রেপ্তার না। আমার বিশ্বাস, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে অতিউৎসাহী হয়ে কেউ গ্রেপ্তার করতে না যায়।’
সাকিবের ক্ষেত্রে সবাই যেমন সরব, আমিনুল ইস্যুতে সবাই (সংবাদমাধ্যম) চুপ ছিলেন কেন? এ প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা তো জানেন, এভরি অ্যাকশন হ্যাজ সাম রিয়্যাকশন। ইকুয়েল রিয়্যাকশন বলে। কিছু রিয়্যাকশন তো হয়। সেটা আমরা পছন্দ করি না। কিন্তু এই রিয়্যালিটিটা তো বুঝতে হয়। আউট অব দ্য ব্লু তো আসে নাই। আমিনুলকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দিনের পর দিন জামিন দিচ্ছিল না। আমি নিজে শুধু প্রথম আলোতে কলাম লিখেছি। আপনাদের কাউকে কলাম লিখতে দেখি নাই আপনাদের পত্রিকায়।’
বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্যটা এসেছে আমিনুলের হাত ধরেই। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন আমিনুল।
তবে আমিনুল যেমন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার আশা, সাকিব গ্রেপ্তার হবেন না। আসিফ নজরুলের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁর (আমিনুলের) নেতৃত্বে। তাঁকে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। দিনের পর দিন তাঁর জামিন নাকচ করেছে। সাকিবের বিরুদ্ধে শুধু মামলা হয়েছে। আমি আশা করি, সাকিব গ্রেপ্তার হবে না। আমি যতদূর জানি, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে এ রকম একটা নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, স্পষ্টত খুব অবিশ্বাস্য কিছু না হলে যতটা পারা যায় আইনগত সীমার মধ্যে থেকে ধৈর্য দেখানোর জন্য।’