Connect with us

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে এক সপ্তাহ ধরে কলেজছাত্র নিখোঁজ, পরিবারের দাবি ‘অপহরণ’

বিয়ানীবাজারে এক সপ্তাহ ধরে কলেজছাত্র নিখোঁজ, পরিবারের দাবি ‘অপহরণ’

সিলেটের বিয়ানীবাজারে এক সপ্তাহ ধরে এক কলেজছাত্র নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর বিকালে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর পরিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

পরিবারের দাবি তাকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, বিষয়টি এখনো তদন্ত করা হচ্ছে।

নিখোঁজ মো. জাবির আহমদ (২০) উপজেলার দুবাগ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের মো. আজমান হোসেনের ছেলে। সে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় দুবাগ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।

নিখোঁজ জাবিরের বাবা মো. আজমান আলী বলেন, ‘গত ১১ অক্টোবর বিকালে প্রতিদিনের ন্যায় সে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হয়। তিনি বলেন, ছেলের সন্ধান পেতে অনেক খোঁজাখুজি করেছি। কিন্তু গত ১২ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। তাই থানায় জিডি করেছি।’

জাবিরের ভাই মো. জামিল আহমদ জানান, ‘মেওয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি। কিন্তু এরপর থেকেই ওই জমি নিজের দাবি করে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার করছে আমাদেরই প্রতিবেশী আব্দুল খালিক নামে জনৈক একজন সাংবাদিক। এমনকি মামলা থেকে বাঁচতে তার কাছে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই টাকাও কয়েক দফায় নেয়ার পরও সে আমাদেরকে রেহাই দিচ্ছে না। ‘

জাবিরের ভাই আরও জানান, ‘শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে আমার ভাই জাবিরকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধরের চেষ্টা করেন সাংবাদিক আব্দুল খালিক। কিন্তু ওইদিন তার সহপাঠীরা তাকে ওই সাংবাদিকের হাত থেকে আমার ভাইকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকায় আমাদের কারো সাথেই কোন শত্রুতা নেই। তাই সবকিছু মিলিয়ে ওই সাংবাদিককেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আর সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে আমাদের ধারণা আরও বেড়েছে। আমার ভাই নিখোঁজ নয়, ওই সাংবাদিকই তাকে অপরহণ করেছে আমাদের শায়েস্তা করা জন্য।’

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, জাবিরকে অপহরণ করা হয়েছে। একাধিক মোবাইল ফোন যোগে নিখোঁজের পরিবারকে অপহরণের কথা বলে নানাভাবে অর্থ দাবি করছে একটি চক্র।

এদিকে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিক আব্দুল খালিক জানান, ‘আমি কেন তাদের ছেলেকে অপহরণ করবো? আমি এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত নই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। তবে এটি ঠিক যে, তাদের সাথে আমার জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা চলমান আছে, যা আদালতে বিচারাধীন।’

তিনি আরও জানান, ‘মো. আজমান আলী গংসহ অন্যান্যদের সাথেও আমার জমি-জমা সংক্রান্ত একাধিক মামলা-মোকাদ্দমা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেগুলোর কারণেই আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ তুলে আমার মানহানি করছেন। তিনি জানান, আমিও চাই তাদের নিখোঁজ ছেলে উদ্ধার হোক এবং প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে আসুক।’

এছাড়াও ২০০৫ সালে মো. আজমান আলী কুয়েতে থাকাবস্থায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে মাদকদ্রব্যসহ প্রশাসনের লোকজন পাঠিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলেও দাবি করেন সাংবাদিক আব্দুল খালিক।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নিখোঁজের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরিবার দাবি করছে, ওই ছেলেটিকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে আমরা ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকার লোকজন ও ছেলের সহপাঠীদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আইনানুগভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

Continue Reading

আলোচিত

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গেলেন বিয়ানীবাজারের এম এ বাতিন আহমদ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গেলেন বিয়ানীবাজারের এম এ বাতিন আহমদ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গেলেন বিয়ানীবাজারের এম এ বাতিন আহমদ

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে বাংলাদেশীদের একজন হয়ে উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজারের সন্তান কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক এম এ বাতিন আহমদ। তার বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের দাসউরা গ্রামে।

গত ২০ জানুয়ারি সোমবার ২০২৫ ইং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।

ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি বাংলাদেশ এবং বিয়ানীবাজারের মানুষের জন্য সম্মানজনক বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীরা।

এম এ বাতিন দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ বসবাস করে আসছেন। দেশে থাকাকালী সময় ছাত্র রাজনীতি ও ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি বাংলাদেশ ছাত্রদল বিয়ানীবাজার বাজার রাখার যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন,পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় যুবদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। রাজনিতির পাশাপাশি মানুষের জন্য তিনি কাজ করতে চান।

Continue Reading

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে মাদরাসা ছাত্রের লাশ নদী থেকে উদ্ধার

বিয়ানীবাজারে মাদরাসা ছাত্রের লাশ নদী থেকে উদ্ধার

কুশিয়ারা নদীতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ২৭ ঘণ্টা পর হাফিজ সালমান আহমদ (১৪) নামের মাদরাসাছাত্রের লাশ পাওয়া গেছে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর এলাকার মাদরাসা খেওয়াঘাট এলাকায় নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

সালমান আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর গ্রামের হাফিজ আব্দুল ফাত্তাহ’র ছেলে ও সিলেট জামেয়া দ্বিনিয়া মাদরাসার ছাত্র। তিনি সদ্য হিফজ সম্পন্ন করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সালমানের বাড়ির পাশ দিয়েই কুশিয়ারা নদী বয়ে গেছে। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুরান মাদরাসা খেওয়াঘাট এলাকায় নদীতে গোসল করতে নামেন হাফিজ সালমান। কিন্তু সাতার না জানায় তিনি তলিয়ে যান।

এরপর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, পুলিশ ও স্থানীয় জনতা সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও তার দেহ উদ্ধার করতে পারেনি। পরে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলের অদূরে ভেসে উঠলে এলাকাবাসী সালমানের নিথর দেহটি উদ্ধার করেন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাফিজ আব্দুল ফাত্তাহ’র ঘনিষ্টজন জমিয়তে ইসলাম নেতা লুৎফুর রহমান।

তিনি বলেন- ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের আবেদন করা হবে।

এদিকে, হাফিজ সালামনের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Continue Reading

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে যৌ’ন’কর্মী ও ডাকাত সহ আটক ৪

বিয়ানীবাজারে যৌ'ন'কর্মী ও ডাকাত সহ আটক ৪

বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ডাকাতি মামলার আসামীসহ মোট ৪ জন আসামী গ্রেফতার। রবিবার (২৭ অক্টোবর) ভোররাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

রবিবার গনমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিয়ানীবাজার থানা এই তথ্য জানায়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রবিবার ভোররাতে বিয়ানীবাজার থানার এসআই/শহিদুল ইসলামের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের আভঙ্গী গ্রামের জনৈক হেলাল উদ্দিনের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ডাকাতি মামলার এজাহার নামীয় আসামী ছাদিক আহমদ (২২) কে আটক করে। আটক ছাদিক উপজেলার পৌর এলাকার শ্রীধরা গ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের পুত্র।

এসময় অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীসহ আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, মুড়িয়া ইউনিয়নের আভঙ্গী গ্রামের মৃত কুতুব আলীর পুত্র হেলাল উদ্দিন (৭০), একই ইউনিয়নের আষ্টগরি গ্রামের আইনুল হকের পুত্র আলীম উদ্দিন (৩২), বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার শ্রীধরা গ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের পুত্র ছাদিক আহমদ (২২), এবং ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমানে সিলেটে বসবাসরত যৌনকর্মী তামান্না বেগম।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক চৌধুরী জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ২৯০ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে আসামীদের সোপর্দ করা হয়েছে।

Continue Reading

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে পুকুর থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

বিয়ানীবাজারে পুকুর থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

সিলেটের বিয়ানীবাজারে পুকুরে ডুবে মতিউর রহমান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

আজ শনিবার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের বিবিরাই গ্রামের নির্জন স্থানের এক পুকুর থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। মতিউর দেবারাই মেইনবাড়ি গ্রামের মৃত মিছির আলীর ছেলে। তিনি স্থানীয় পোস্ট অফিসে দায়িত্বরত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানীর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এলে জানা যাবে তিনি কিভাবে মারা গেছেন।

Continue Reading

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে পুলিশের অভিযানে ৫ জন গ্রেফতার

বিয়ানীবাজারে পুলিশের অভিযানে ৫ জন গ্রেফতার

বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের অভিযানে ওয়ারেন্টভূক্ত ২, নিয়মিত মামলার ১ জন ও মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত ৩ জনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দুবাগ ইউনিয়নের বাঙ্গালহুদা গ্রামের আইছ আলীর পুত্র জুয়েল আহমদ, দক্ষিণ পাড়িয়াবহরের আনছার আলীর পুত্র আফতাব আলী, ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁওয়ের সিরাজ উদ্দিনের পুত্র রুহুল আমিন মিছবাহ, নয়াগামের মৃত আতর আলীর পুত্র দিলকদর ও বড়লেখা চান্দগ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র হোসেন আহমদ।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে পারিঃ জারী-২৫২/২৩ মামলার বিজ্ঞ আদালতের পরোয়ানাভূক্ত আসামী জুয়েল আহমদ, জিআর-১২১/২৩ মামলার বিজ্ঞ আদালতের পরোয়ানাভূক্ত আসামী আফতাব আলী, বিয়ানীবাজার থানার মামলা এজাহার নামীয় আসামী রুহুল আমিন মিছবাহ (৩০) কে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়াও সহকারী কমিশনার ভূমি কাজী শারমিন নেওয়াজ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গাঁজা সেবনের অভিযোগে লাউতা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়িয়াবহর মৃত আনছার আলীর ছেলে আফতাব আলী, পৌরসভার নয়াগ্রাম এলাকার মৃত আতর আলীর ছেলে দিককদর ও বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকার আব্দুল আজিজের পুত্র হোসেন আহমদকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৮ এর ৩৬ (৫) ধারা মোতাবেক ১৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Continue Reading

বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে তুরাব হত্যা মামলা তিন মাসেও গ্রেফতার নেই কোন আসামি

বিয়ানীবাজারে তুরাব হত্যা মামলা তিন মাসেও গ্রেফতার নেই কোন আসামি

সিলেটে প্রকাশ্য দিবালোকেত পুলিশের গুলীতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব নিহতের তিন মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে আজ। কিন্তু এখনো গ্রেফতার নেই কেউ, এমনকি নির্বিচারে গুলীবর্ষণকারী পুলিশ এখনো বহাল তবিয়তে।

মামলার তদন্তভার পিবিআইর কাছে হস্থান্তর করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তার রহস্যমূলক আচরণে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই বাদ জুমআ নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। তখন ন্যূনতম কোনো উত্তেজনা ছিল না। নিত্যদিনের মতো সেদিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকগণ। পাশেই ছিল পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান। হঠাৎই অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা এসএমপির সহকারী কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীরের মারমুখী আচরণে বদলে যায় পরিস্থিতি। উত্তপ্ত হয়ে উঠে কোর্ট পয়েন্ট এলাকা। ওই পুলিশের কিলিং মিশনের টার্গেটে পড়ে যান সাংবাদিক এ টি এম তুরাব।

দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান এ টি এম তুরাব সেদিন সড়কের রেলিংয়ে এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাতে মোবাইল ক্যামেরায় দেহে প্রেস লেখা জ্যাকেট (ভেস্ট) ও হেলমেট পড়ে বিএনপির মিছিল ও পুলিশের অবস্থানের মাঝখানে ভিডিও ধারণ করছিলেন।

এমন সময় হঠাৎ ‘বিগড়ে’ যান এসএমপির ভয়ঙ্কর এডিসি দস্তগীর। কনস্টেবলের হাত থেকে একটি বন্দুক নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়া শুরু করলেন। তার গুলির নিশানা ছিল সাংবাদিক তুরাব। তখন দস্তগীরের দেখাদেখি অন্য পুলিশ সদস্যরাও বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ে। পুলিশের ছুঁড়া ৯৮টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয় তুরাবের শরীরে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন তার সহকর্মীরা। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জরুরিভিত্তিতে সোবহানীঘাট ইবনে সিনা হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই আইসিইউ-তে থাকা অবস্থায় সাংবাদিক তুরাব সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।

তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, তুরাবের শরীরে ৯৮টি ছররা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) তুরাব হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

সিলেটের সকল মহলের প্রিয় সম্ভাবনাময় সাংবাদিক তুরাব নিহতের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কোনো খুনী, এমনকি তুরাব হত্যার সাথে জড়িত তৎকালিন এডিসি দস্তগীর ও উপকমিশনার আজবাহার আলীকে এখনো বরখাস্ত করা হয়নি। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে ছাত্র-জনতার মনোনীত অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। তিন মাসেও তুরাবের কোনো খুনীকে গ্রেফতার না করতে পারায় ক্ষুব্ধ সিলেটের নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজ। বিক্ষুব্ধ তুরাবের পরিবার।

জানা গেছে, পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় গত ২৪ জুলাই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করে। জিডির ব্যাপারে তৎকালিন কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপন বলেছিলেন, ‘কার এবং কোনো দিক থেকে আসা গুলি বিদ্ধ হয়ে তুরাব মারা গেছেন, এসব বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই একটি মামলা করা হয়েছে। সেটির তদন্ত চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগটি আমরা রেখেছি এবং জিডি হিসেবে রেকর্ড করেছি। পরিবারের লিখিত অভিযোগ ও পুলিশের মামলাকে সমন্বয় করে তদন্ত এগোচ্ছে। এরপর থেকেই অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যায় তুরাব হত্যা মামলা।’

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো: আজরফ (জাবুর)। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো: সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় আরো ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে, আদালতে মামলা দায়েরের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। গ্রেফতার করা হয়নি কোন আসামিকে। মামলার অন্যতম আসামি এসএমপির কোতোয়ালী থানার তৎকালিন ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে ২৩ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল বিজিবি। গ্রেফতারের পর মাধবপুর থানায় হস্তান্তরের পর পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। তাকে গ্রেফতারে উপরের কোনো নির্দেশনা না থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

এদিকে চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। একইসাথে পিবিআই হেড কোয়ার্টার থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করতে এসএমপির কোতোয়ালী থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৬ অক্টোবর মামলার নথিপত্র পিবিআই সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক মুরসালিনকে বুঝিয়ে দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই শাওন।

এরপর ৯ অক্টোবর বুধবার বিকেলে নগরীর বন্দরবাজার সংলগ্ন শহীদ সাংবাদিক তুরাব চত্বর (কোর্ট পয়েন্ট) এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের মাধ্যমে তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মুরছালিন। এ সময় মামলার বাদি তুরাবের আবুল আহসান মো: আজরফ (জাবুর) ছাড়াও সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তুরাবের শরীরে গুলি লাগার স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করার আশ্বাস প্রদান করেন পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: মুরসালিন।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা মুরসালিন সগোত্রীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে কাজ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তুরাবের সহকর্মী সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যগণ। তারা বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে সকল ভিডিও ফুটেজ দেয়া হয়েছে এমনকি সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকবৃন্দ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তুরাবের হাতে থাকা মোবাইল ফোন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের তিন মাসেও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো: আজরফ (জাবুর)।

তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার ভাই হত্যার তিন মাস সময় পার হয়েছে। মামলা এফআইআর হওয়ার পর আরো দুই মাস চলে গেছে এরপরও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আমরা বিস্মিত। এর মাধ্যমে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে তো সব পুলিশ জড়িত নয়। তাহলে আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?

তিনি বলেন, আগে কোতোয়ালী থানার কাছে ছিল। এখন পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমাদের কাছে যা চেয়েছেন আমরা সব দিয়েছি। এরপরও পিবিআইয়ের বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখাতে পারেননি। এতে আমরা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত।

পিবিআই সিলেটের ইন্সপেক্টর মুরসালিন শুক্রবার রাতে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের স্বাক্ষ্য নিয়েছি। এব্যাপারে প্রাপ্ত সকল বিষয় জানানোর জন্য আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। পিবিআই হেডকোয়ার্টারকে সব বিষয়ে অবগত করে এসেছি। আমার কাছে প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে গোলাম কাউসার দস্তগীর একজন পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক নিচ্ছেন সেই দৃশ্যটা রয়েছে। কিন্তু তিনি যে সাংবাদিক তুরাবকে সরাসরি গুলী করছেন এমন ফুটেজ পাইনি। এরপরও আমি বিভিন্ন উৎস থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। পুলিশ হলেই ছাড় দেয়া হবে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। কারণ রায়হান হত্যা মামলায় পিবিআই পুলিশের বিরুদ্ধে সত্য রিপোর্ট দিয়েছে। সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায়ও সঠিক রিপোর্ট দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, সাধারণ আসামি এবং চাকরিরত সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে কিছু আইন রয়েছে। যার কারণে কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে মামলার আসামিরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তারা আইন সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তাই পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাওয়া হবে। এজন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র : দৈনিক নয়া দিগন্ত

Continue Reading

Trending