Beanibazarview24.com
‘অয় নাই। অর লাশ লাগব না। শরীরের একটা টুকরা দেন। আমি ওইডা নিয়াই বাচুম।’ কথাগুলো নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোহানের মায়ের।তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন ছেলের লাশ নিতে।কিন্তু রোহানের শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে, লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না।এখন লাশ শনাক্ত করতে মাকে দিতে হবে ডিএনএ নমুনা।
চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন রোহান। বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে ঢুকরে কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রোহানের মা-বাবা। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডিএনএ নমুনা দিতে যান তার মা। সেখানে ডিএনএ নমুনা দিতে অপেক্ষায় থাকা রোহানের মা বলেন, তার একমাত্র ছেলের লাশ না পেলেও ফিরে পেতে চান শরীরের এক টুকরা অংশ। এখনও তার হাতে রয়েছে রোহানের ছবি।
কিছুক্ষণ পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়া এই মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার ছেলেডারে আইনা দাও। আমি জানি অয় (সে বেঁচে) নাই। অর লাশ লাগব না। শরীরের একটা টুকরা দেন। আমি ওইডা নিয়াই বাচুম।
এর কিছুক্ষণ পরই রোহানের মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে আসা সিআইডি টিম।
সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন গণামাধ্যমকে জানান, ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি ২২ জনের লাশ শনাক্ত করতে বেশ সময় লাগতে পারে।
তিনি জানান, যারা লাশের সন্ধানের জন্য এসেছেন তাদের বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানদের রক্তের নমুনা রাখা হবে। যদি তারা না আসেন, তা হলে ভাইবোনদের নমুনা রাখা হবে। তবে পুরো বিষয়টির জন্য সময় লাগবে ৭ থেকে ২১ দিন।
চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহত রোহান বিয়ের কেনাকাটা করতে চার বন্ধুকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। আরও কিছু কাজও ছিল তার। সব শেষ করে বাসায় ফেরার কথা ছিল।
কিন্তু বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড সেই উৎসব থেকে নাই হয়ে গেলেন রোহান। থামিয়ে দিল তার সব আনন্দ ও উৎসব। আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না রাজধানীর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রোহান।
রোহানের সঙ্গে ছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র আরাফাত। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করলে লাশ হলেন তিনিও। কাজী আলাউদ্দিন রোডসংলগ্ন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আরাফাত।
রোহানের চাচাতো ভাই মমিন জানান, রোহানের মরদেহ মর্গে আছে বলে নিশ্চিত হলেও কেউ শনাক্ত করতে পারছি না।
অপর একটি মোটরসাইকেলে রোহানের সঙ্গে ছিলেন তার ভাগ্নে লাবিব, রমিজ ও সোহাগ।
লাবিবের মাথার সামান্য অংশ পুড়লেও তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। রোহানের নানা ইউনুস খান জানান, রোহানের ছোট বোনের বিয়ে আগামী মার্চে। আর তাই বন্ধুদের নিয়ে সে খুব ব্যস্ততার ভেতর ছিল। বুধবার সে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া ও ডেকোরেশনে কথা বলতে গিয়েছিল। কিছু কেনাকাটার কাজও বাকি ছিল, তখন এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একটি আবাসিক ভবনে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের সময় রাস্তায় যানজটে আটকে থাকায় অনেকে প্রাণে রক্ষা পাননি। আগুনের কবল থেকে পালিয়ে বাঁচার আগেই মৃত্যু তাদের গ্রাস করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। এ ঘটনায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪১ জন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.