‘মা আমার জন্য দোয়া করিও আমি আন্দোলনে যাচ্ছি।’ ‘আমি যদি দেশের জন্য আমি যদি শহীদ হই, তাহলে আমার কোনো দুঃখ নেই।’ ‘আমি মারা গেলে আমার জন্য দোয়া করিও।’ ছেলের স্মৃতি স্মরণ করে প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিলেট নগরীতে গুলিতে নিহত হওয়া শহীদ ক্বারী হাফেজ কামরুল ইসলাম পাবেলের মা দিলারা বেগম।
বুক ফাঁটা আর্তনাদ আর ছেলের ছবি বুকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল তরঙ্গে শত শত ছাত্র-জনতার সাথে ছিলেন মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র ক্বারী হাফেজ কামরুল ইসলাম পাবেল। এসময় ছাত্র-জনতার মিছিলে নগরীর ক্বীন ব্রিজের পাশে আলী আমজদের ঘড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন ক্বারী হাফেজ কামরুল ইসলাম পাবেল। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এমন ঘটনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পাবেলের পরিবারসহ পুরো উপজেলা।
শহীদ কামরুল ইসলাম পাবেলের মা দিলারা বেগম বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগষ্ট সকালে আমাকে ফোন দিয়ে বলে মা আমার জন্য দোয়া করিও আমি আন্দোলনে যাচ্ছি। এসময় দেশের অবস্থা ভালো না থাকায় আমি আমার ছেলেকে নিষেধ করি আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। রাতে খবর পাই আমার ছেলে গুলিতে মারা গেছে। কথাগুলো বলার সময় তিনি বুক ফাঁটা আর্তনাদ আর ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন।’
শহীদ কামরুল ইসলাম পাবেলের বাবা রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে সিলেটে মাদরাসায় পড়তো। সর্বশেষ গত বছরে ৩০ জুলাই বাড়িতে আসছিলো। এরপর আবার সে সিলেটে চলে যায়। ৫আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমার ছেলে মারা যায়। আমার ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কামরুল ইসলাম পাবেল ছিল তৃতীয়। আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। তার যথাযত মূল্যায়ন হলে তার আত্মা শান্তি পাবে।’
শহীদ কামরুল ইসলাম পাবেলের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নিজ ঢাকাদক্ষিণ গ্রামে। তিনি ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম মাদরাসায় লেখাপড়া করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ৩০ পারার মধ্যে ২৮পারা কোরআন শরীফ মুখস্থ করেছেন। আরও ২পারা শেষ করার আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হিফজ শেষ করে হাফেজের সনদও তুলতে পারেন নি পাবেল।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সিলেট নগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মিছিলে অংশ নেন কামরুল ইসলাম পাবেল। এসময় নগরীর কিনব্রিজের পাশে গুলিবিদ্ধ হন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।