যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের একটি অফিস টাওয়ারে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) অফিসার ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী দিদারুল ইসলাম (৩৬)। শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস ও পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ তাকে ‘নায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের রক্ষা করেছেন। খবর রয়টার্সের।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি অফিস ভবনে বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়, যাতে দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হন। পরে বন্দুকধারী নিজেও আত্মহত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আজ আবারও অকারণে বন্দুক সহিংসতার বলি হলাম। চারটি জীবন চলে গেছে, তার মধ্যে একজন আমাদের পুলিশ বিভাগের সদস্য—অফিসার দিদারুল ইসলাম।”
অ্যাডামস জানান, “অফিসার ইসলাম প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এনওয়াইপিডিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন, জীবন বাঁচাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বাসী মানুষ ও ঈশ্বরে আস্থাশীল।”
অ্যাডামস আরও জানান, সোমবার রাতে তিনি দিদারুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন যে দিদার ছিলেন একজন সত্যিকারের বীর।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, দিদারুল ইসলাম ছিলেন বিবাহিত, তার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে এবং তার স্ত্রী বর্তমানে তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন। তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঠান্ডা মাথায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।”
ঘটনার সময় ইসলাম ঐ ভবনে একটি পেইড সিকিউরিটি ডিটেইলে কাজ করছিলেন। এই ধরনের ডিটেইলে অফিসাররা পোশাক পরেই করপোরেট অফিসগুলোর অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন।
ন্যাশনাল ল’ এনফোর্সমেন্ট অফিসারস মেমোরিয়াল ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪২ জন ফেডারেল, স্টেট, কাউন্টি, মিউনিসিপাল ও সামরিক বাহিনীর সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। দিদারুল ইসলাম এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এই মৃত্যু গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
এদিকে, পুলিশ সদস্য দিদারুল ইসলাম নিহতের খবরে বাংলাদেশে তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চলছে শোকের মাতম।