Beanibazarview24.com
ম্যানহাটন; ৩৪ স্ট্রীট সাবওয়ে স্টেশন:
অপেক্ষা করছি ট্রেনের জন্য। পাশে দুজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ওরা এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে দেখছে যে, আমার খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। হুরমুর করে ট্রেন এসে গেল। কাকতালীয়ভাবে ওরা আমার পাশেই বসার জায়গা খুঁজে পেলো। মনে হলো বাংলাদেশি। কেননা, চেহারায় ষোলআনা বাঙ্গালীয়ানা ছাপ। যদিও তাদের পোশাক দেখে বোঝার উপায় নেই।
তারপর তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি বাংলাদেশি কি না? বলতেই দু’জনেই উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো- আমরা দু’বোন ভাবছিলাম আপনি বাংলাদেশিই হবেন। তারপর শুরু হলো দু’জনের প্রশ্নের ঝড়। কোথায় থাকি, কোথায় কাজ করি, কার সাথে থাকি, বিবাহিতা কি না, ছেলে-মেয়ে ক’জন, কত বড় তারা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম- নতুন এসেছেন? দু’জনেই একসঙ্গে মাথা নাড়ালো- না না, সেই ছোট্টবেলায়। ছোট বোন বললো- এখানেই আমাদের প্রথম স্কুল শুরু। হাইস্কুল শুরু হতে না হতেই নানা জায়গা থেকে প্রচুর বিয়ের প্রস্তাব আসতো। দেশ থেকেও বাবা-মা বলতো- মেয়েরা আমেরিকান সিটিজেন, দেখতেও খারাপ নয়। সুতরাং সেরা পাত্র চাই।
মেয়েদের মনেও ঢুকে গেল এই মন্ত্র। প্রচুর দেখাদেখি বাছা-বাছি করেও মন স্থির করতে পারে না। যত ভালো দেখে, ভাবে আরো ভালো চাই। এমন বাছাবাছি করতে করতে বাবা মারা গেল এক পর্যায়ে। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ নিতে হলো। এক সময় কাজ আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালানো কঠিন হয়ে উঠলো।
ক্লাস শেষে ফার্স্টফুডের দোকানে কাজ করতে করতে ক্লান্তিতে এক সময়, পড়াশোনার ইচ্ছেটাই চলে গেল। এ পর্যন্ত বলতে বলতে দু ‘জনেই কেমন উদাস হয়ে উঠলো। বড়জন এবার বলতে শুরু করলো- বাবা মারা যাওয়ার পর আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে যোগাযোগ কমতে শুরু করলো। বিয়ের প্রস্তাব তখনো আসতো। কিন্ত কোনটাই মনে ধরতো না। চিন্তায় চিন্তায় মা অসুস্থ হয়ে পড়লো।
কাজ আর অসুস্থ মায়ের দেখাশোনা করতে করতে কিভাবে যে বছরের পর বছর চলে গেল, টেরই পেলাম না। ভাগ্যিস বাবা বাডী কিনেছিলেন তাই, অসুস্থ মাকে নিয়ে এখান থেকে ওখানে টানাটানি করতে হয়নি। এক সময় মাও মারা গেলেন। ততদিনে আমাদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে প্রায়। এখন বুঝি কত বড় ভুল করেছি।
এখন বাডীতে আমরা দু’বোন থাকি। আনন্দহীন, একঘেঁয়ে জীবন। কাজ করি আর বাডীতে এসে ঘুমাই। নানা রকমের প্রশ্নের সামনাসামনি হতে হয় বলে, আত্মীয়-স্বজনের সাথেও যোগাযোগ রাখি না। এই আমাদের গল্প।
ওদের স্টেশন আসতে, ওরা নেমে গেল। আমার মনটাও বিষাদে ভরে গেল। ওদের কথা ভেবে, ভাবলাম সময়ের কাজ সময়ে করা এবং চাহিদার মুখে লাগাম থাকা ভাল।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.