Tuesday, August 26, 2025
Home Blog Page 76

এই সুখ কত দিন টিকবে জানি না: চমক

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। নিজের পছন্দের মানুষ ব্যবসায়ী আজমান নাসিরকে বিয়ের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে।

তবে সম্প্রতি বিয়ে ও বরকে নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।

বিয়ে নিয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে চমক বলেন, ‘কোনো দামি শাড়ি, সোনা, গয়না, মোটা অঙ্কের দেনমোহর কিছুই না! ৯ টাকা দেনমোহরে, ৯০০ টাকার শাড়ি, হাজার টাকার রজনীগন্ধা, বান্ধবীর শাড়ি আর স্পনসর হিসেবে ইমিটেশনের গহনা পরেই বিয়েটা করলাম! মানুষটার সম্পদ বলতে কিছুই নেই, অতীতও খুব একটা মধুর নয়! কিন্তু রাজার মতো একটা মন আছে, যেখানে সে আমাকে রানীর মতো রেখেছে। আমি সুখী। এই মুহূর্তে আমার মতো সুখী কজন আছে জানি না। আবার এই সুখ কত দিন টিকবে তা-ও জানি না।’

ফেসবুকে সমালোচকদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে চমক লিখেছেন- ‘জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে নাকি পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য- তাহলে বিয়ে বিষয়টি নিয়ে কেন আমরা এত আলোচনা-সমালোচনা করি? বিধাতা আমার বিয়েটা এই মানুষটার সঙ্গেই লিখে রেখেছিল। এই মানুষটাকে সবাই প্রচণ্ড ধনকুবের কিংবা অসম্ভব ক্ষমতাশীল, খারাপ বা চরিত্রহীন মানুষ বলছে- অথচ এই মানুষটা এগুলোর একটাও না! টাকাপয়সা, ক্ষমতা বরং আমারই বোধ হয় একটু বেশি! এখন নিশ্চয়ই বলবেন তাহলে কেন তাকে বিয়ে করলাম?’

ব্যবসায়ীকে বিয়ের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চমক লিখেছেন, ‘সারাদিন আমি কাজ করে বাড়ি ফিরলে মানুষটা জিজ্ঞাসা করে, রাতে কী খাবে? শরীর কেমন? প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও জ্বরে মানুষটা আমার পাশে সারা রাত জেগে থাকে! আমার শুটিংয়ের ফাঁকে খোঁজ নিতে আসে এই কারণে যে আমার কিছু লাগবে কিনা অথবা অনর্থকই আমার পাশে বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা! আমার কাছে এসবের মূল্য টাকা দিয়ে বিচার হয় না! খুব সাধারণ চাওয়া-পাওয়া আমার। তাই খুব সাদামাটাভাবেই এই মানুষটিকে জীবনসঙ্গী করে নিলাম।’

একপর্যায়ে চমক লিখেছেন- ‘এই মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে, বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা। আপনারাও সুখে থাকুন, আমার জীবন নিয়ে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে অল্পতেই সুখ খুঁজতে শিখুন! আপনার জীবনসঙ্গী কিংবা আশপাশের মানুষকে জাজ না করে ভালোবাসুন, ভালো থাকুন, ভালো রাখুন। আর বিয়েটা যেন টাকাপয়সা দেখানো, স্ট্যাটাস শো-অফের জন্য না হয়, বিয়েটা যেন হয় ভালোবাসার, ভালো থাকার।’

বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সড়কে টিকটকারদের উৎপাত

মৌলভীবাজারের বড়লেখার দাসেরবাজার-কাননোগাবাজার সড়কের কয়েকটি স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কদিন ধরে ওই সড়কটিতে টিকটকারদের চরম উৎপাত বেড়েছে। সড়কটিতে ভিড় লেগে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এতে তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। অবশ্য টিকটকারদের উৎপাত ঠেকাতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের দাসেরবাজার-কাননোগাবাজার সড়কের দুইপাশে সারি সারি খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুরগাছগুলো সড়কটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বছরের প্রায় প্রতিদিনই সেখানে কমবেশ মানুষের আনাগোনা থাকে। অনেকেই সড়কটিকে ‘দুবাই’ সড়ক নামেও ডাকেন।

সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জনগুরুত্বপূর্ণ দাসেরবাজার-কাননোগাবাজার সড়কটি। সড়কটির বিভিন্নস্থানে পানি উঠেছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন বাড়তি টাকা গুণে নৌকার পাশাপাশি পানি মাড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছোটখাটো যানবাহনে যাতায়াত করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটির কয়েকটি স্থান এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। দায়িত্বরত পুলিশ ঘুরতে আসা টিকটকারদের সড়কটিতে সরে যেতে বলছে। কারও আবার মোটরসাইকেলের কাগজ যাচাই করছে।

সড়কটিতে ঘুরতে আসা অনিক ও ফাহাদ নামে দুই যুবক জানান, তারা সেখানে টিকটক করতে আসেননি। ঘুরতে এসেছিলেন। পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকে কাগজপত্র দেখতে চাইছে।

কয়েকজন টিকটকার জানান, তারা বন্যাকবলিত এলাকার ছবি-ভিডিও অনলাইনে দিয়ে মানুষের দুর্দশার চিত্র সবাইকে দেখাচ্ছেন। এটা দোষের কিছু নয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, সড়কে বন্যার পানির কারণে আমাদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। বাড়তি টাকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এর মধ্যে টিকটকারদের উৎপাত বেড়েছে। যার কারণে সড়কে মানুষের জট লেগেছে। এতে যান ও নৌকা চালকরা বেশি ভাড়া চাইছেন। তাদের কারণে আমারও বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি।

বড়লেখা থানার এসআই মাসুদ পারভেজ সোমবার বিকালে বলেন, সড়কটিতে কেউ বন্যার পানি দেখতে এসেছিলেন, কেউ কেউ টিকটক ভিডিও করতে এসেছিলেন। এতে ভিড় লেগে ছোট সড়কটিতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমরা সেখানে অকারণে ঘুরতে আসা লোকজনদের সরিয়ে দিয়েছি।

সিলেটে অপ্রতুল ত্রাণ, হাওড়াঞ্চলের বন্যার্তরা বঞ্চিত

পঞ্চম দফা বন্যায় সিলেট বিভাগে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখনো বানভাসি। ইউনিসেফের মতে, বানভাসিদের মধ্যে শুধু শিশুই ৮ লাখ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভাগের মধ্যে বানভাসি মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জ জেলায়। প্রায় ১৫ লাখ। শুক্রবার থেকে পানি একটু কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ চরমে। ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আছে ত্রাণের অপ্রতুলতাও।

শুক্রবার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। তিনি বলেন, সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সুনামগঞ্জের ২০টি নদী খনন জরুরি।

সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার চারটি পৌরসভা এলাকাসহ ৭৮টি ইউনিয়নের ১০১৮ গ্রামের ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৭ জন মানুষ বন্যা কবলিত। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৪২৯ জন বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের মধ্যে ১০ টন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দসহ বণ্টন করা হয়েছে। তবে সরকারি হিসাবে ত্রাণ মজুত পর্যাপ্ত দেখানো হলেও বাস্তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। সুনামগঞ্জ হাওড় বেষ্টিত অঞ্চল বিধায় প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোও অনেকটা দুরূহ।

সিলেট জেলা প্রশাসন শুক্রবার রাতে জানায়, সিলেট মহানগরীর ২৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৪৮টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার ১ হাজার ৫৫২টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত। বানভাসি মানুষের আশ্রয়ের জন্য জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৭১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ১১ লাখ মানুষের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৮৯ হাজার বানভাসি মানুষ। সিলেট নগরীতে এবারের বন্যায় টানা ১৫ দিন ধরে ডুবে আছে নগরীর সি ব্লকের বেশ কয়েকটি বাসাবাড়ি।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলায় বানভাসি মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪০২ জন। তাদের মধ্যে ৪২২ টন জিআর চাল, ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ নগদ টাকা, ৪৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১২শ রান্না করা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। হাওড়াঞ্চলের বন্যার্তরা ত্রাণবঞ্চিত।

হবিগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমী রানী বল জানান, জেলায় বানভাসি মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৫০ জন। বন্যাকবলিত ১৩টি ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে ৫১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে ১৬ টন। তিনি দাবি করেন, চাল, নগদ টাকা, গোখাদ্য ও ঢেউটিন পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুত আছে। মজুত আছে ২৮১ টন চাল।

এবারের পঞ্চম দফার বন্যায় আগের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট মহানগরী। ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি বন্যা কবলিত। সিলেট নগরে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫৫ হাজার। এদের মধ্যে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ।

শুক্রবার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে সুরমার কীনব্রিজ তীরে দাঁড়িয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামীতে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করেছি। তিনি বলেন সুরমা-কুশিয়ারাসহ ২০টি নদী আমরা খনন করব। খনন কাজ করলে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে আমি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছি। উজান থেকে যে পরিমাণ পানি আসে তা ধারণ করার ক্ষমতা তৈরি করার জন্য যেসব নদী ও খাল খনন করার দরকার সিলেটের প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বন্যার খোঁজখবর রাখছেন, মনিটরিং করছেন। তিনি আমাকে সব সময় সজাগ থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার আসার আগে এই সিলেটের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীকেও তিনি পাঠিয়েছেন। সার্বক্ষণিক তিনি সিলেটের খবর রাখছেন এবং সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করার যা যা করণীয় তা করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ-সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, কাউন্সিলররা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস, সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজু লস্কর প্রমুখ।

অপরদিকে বন্যার পানি ঠেকাতে সুরমা নদীর চারপাশে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এত বছরেও কেন শহর রক্ষা বাঁধ করেনি? এই প্রশ্ন কেউই করে না। তার মতে, সিলেটে ১৫ বছরেও ইফেকটিভ কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ইউনিসেফ। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট জানান, বন্যায় ইতোমধ্যে ২০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সাত লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। তাদের জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো শিশু। ইউনিসেফ বন্যা কবলিত প্রায় এক লাখ মানুষের মধ্যে নিরাপদ পানি বিতরণ করেছে। তিনি আরও জানান, সিলেট বিভাগে ৮১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ১৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে বন্যায় সিলেটের ১১ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, পানি না নামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। জেলার মাঠে এখনো ফসল আছে ২০ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৭০৭ হেক্টরের ফসল প্লাবিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সিলেট জেলার বিশ্বনাথে ৮৬১ হেক্টর, গোলাপগঞ্জে ৭৫০, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫৬০, গোয়াইনঘাটে ৪১৫, জকিগঞ্জে ৩৫০, ওসমানীনগরে ৩১০, বিয়ানীবাজারে ৯০, কানাইঘাটে ৭৫, দক্ষিণ সুরমায় ৫০, কোম্পানীগঞ্জে ৪০ ও বালাগঞ্জে ৫ হেক্টর আউশ ধান প্লাবিত হয়েছে। আউশ বীজতলা প্লাবিত হয়েছে গোলাপগঞ্জে ১৬০ হেক্টর, বিশ্বনাথে ১৫৪, সিলেট সদরে ১০০, জৈন্তাপুরে ৯৫, দক্ষিণ সুরমায় ৮০, বিয়ানীবাজারে ৫৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪৮, কানাইঘাটে ৪২, বালাগঞ্জে ৩৫, ওসমানীনগরে ২৯, কোম্পানীগঞ্জে ২৭, জকিগঞ্জে ২৩ ও গোয়াইনঘাটে ৮ হেক্টর রয়েছে।
জেলায় মোট ৬ হাজার ৬১৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি আছে। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার ১ হাজার ১২০ হেক্টর, সিলেট সদরে ৭২০, বিয়ানীবাজারে ৫৩০, জকিগঞ্জে ৪৬৫, গোলাপগঞ্জে ৪৫০, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪৪৮, দক্ষিণ সুরমায় ৪৩৫, বালাগঞ্জে ১৭৫, গোয়াইনঘাটে ১০৫, ওসমানীনগরে ১০০, জৈন্তাপুরে ৮০, কোম্পানীগঞ্জে ৫২ ও কানাইঘাটে ২৮ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও সিলেটের বোনা আমনের মধ্যে গোয়াইনঘাটে ৮২ হেক্টর, কানাইঘাটে ৩৬, জকিগঞ্জে ১৮, দক্ষিণ সুরমায় ১১, জৈন্তাপুরে ১০ ও বালাগঞ্জে ৪ হেক্টর রয়েছে।

অপরদিকে বন্যায় ২৪ হাজারের বেশি গ্রাহক বিদ্যুবিহীন। বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি ১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সিলেট জোনের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, লাইন, ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক পোলের ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেটের অধীনে ৩৩/১১ কেভির মোট ২১টি উপকেন্দ্রের মধ্যে সব উপকেন্দ্রই বর্তমানে চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে বিদুৎ সরবরাহ সচল রয়েছে। বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেট বিভিন্ন শ্রেণির মোট গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৯ জন। সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ২২৫ মেগাওয়াট। বিতরণ অঞ্চল, বিউবো, সিলেট এলাকায় ৯টি ১৩২/৩৩ কেডি গ্রিড উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়।

সিলেট বিভাগে চলমান বৃষ্টিপাত ও উজান হতে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার প্রভাবে ৩৩/১১ কেভি ২১টি উপকেন্দ্রের মধ্যে ৭টি উপকেন্দ্রের অভ্যন্তর ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করলেও নিরাপদ দূরত্বে থাকায় উপকেন্দ্রগুলো চালু রয়েছে।

সিলেট জোনে বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাথমিকভাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিতরণ জোনের আওতাধীন সব এলাকাই কমবেশি বন্যা কবলিত হওয়ায় বন্যার পানি কমার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

এদিকে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত খতিয়ান এখনো পুরোপুরি উঠে আসেনি। তবে বিভিন্ন দপ্তরের খসড়া হিসাব অনুযায়ী চতুর্থ দফার বন্যাতেই ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। খসড়া হিসাব অনুযায়ী শুধু সিলেট সিটির সড়কে ১০০ কোটি, এলজিইডির সড়কে ১১৮ কোটি, সওজের আওতাধীন সড়কে ৮৪ কোটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০ কোটি, কৃষি বিভাগের ১৪২ কোটি ও মৎস্য খাতে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই হিসাব চতুর্থ দফা বন্যার। পঞ্চম দফা বন্যার পানি নামলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো খতিয়ান উঠে আসবে। মোট ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
-তথ্য সূত্র : যুগান্তর

খাটের নিচে ৩ মরা বিড়ালের সঙ্গে রাসেল ভাইপার, অতঃপর…

ভোলার ইলিশা ও দৌলতখান থেকে একই দিনে দুটি রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে আতঙ্কিত হয়ে সাপ দুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে ইলিশা ও রাতে দৌলতখানে সাপ দুটি পাওয়া যায়।

এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ১ ওয়ার্ডের জালু মাঝির বসতঘর থেকে আরো একটি রাসেল ভাইপার উদ্ধার করা হয়।

জালু মাঝি জানান, তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়ালকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারকে দেখতে পায়। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের পাকার মাথা এলাকায় বাড়ির পাশে জালের সঙ্গে পেচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার পাওয়া যায়। এ সময় স্থানীয়রা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে মাটিচাপা দেন।

ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বাচ্চা দেওয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে আসতে পারে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ভূমধ্যসাগরে নিহত ১১: অধরাই রয়ে গেল আলীর স্বপ্ন

মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার খানকান্দি এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে আলী হাওলাদারের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে গিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু নেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী দুইটি নৌকা ডুবে ইতালির দক্ষিণ উপকূলে ১১ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এদের একজন আলী হাওলাদার। আলি সম্প্রতি দুবাই হয়ে লিবিয়া পৌঁছান। এর আগেও একবার সমুদ্র পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। দ্বিতীয় বার আবার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার নৌকা ডুবিতে নিহত হয় আলী।

মঙ্গলবার লিবিয়া হয়ে ইতালী যাবার উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গেলে দুর্ঘটনায় ১১ জন মারা যান। এই ১১ জনের মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের আলী হাওলাদার, সাব্বিরসহ তিনজন রয়েছেন।

মৃত আলী হাওলাদারের স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, দেশে থাকালীন সময়ে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন আলী। স্বপ্ন ছিল ইউরোপ গিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাবেন। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে গিয়ে এভাবে মারা যাবে তা মেনে নিতে পারছি না। পরিবারে ৬ বছরের এক ছেলে ও এক বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এখন সংসার চালানো দায়।

জানা যায়, আলী হাওলাদার ধার-দেনা করে পরিবারের সচ্ছলতার আশায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইতালি যাত্রা করেন। কিন্তু আলীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারজুড়ে চলছে শোকের মাতম। মৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

উল্লেখ্য, ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী দুইটি নৌকা ডুবে ইতালির দক্ষিণ উপকূলে ১১ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন মাদারীপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ২৬ শিশুসহ এখন ৬৪ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, মাদারীপুরের কতজন নিহত হয়েছে সেই বিষয়টি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। তবে মরদেহ ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রশাসনিক সবধরনের সহযোগিতা করবো।

সিলেটে নামছে পানি, ভাঙছে সড়ক-ব্রিজ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল থেকে কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে দুপুরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ভারতের চেরাপুঞ্জির আকাশে মেঘ থাকলে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর চেরাপুঞ্জিতে একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। উজানের পাহাড়ি ঢল কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। অন্যান্য নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয় নি কোনো এলাকা। কিছু কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ভেসে ওঠতে শুরু করেছে।

এদিকে হাওরের পানি নামতে না পারায় গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা সদরের সড়কগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। তবে সুরমা নদীর পানি কমতে থাকায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি কিছুটা কমেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সময় বেশকিছু রাস্তা নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিলেট নগরীর আম্বরখানা-সাহেবের বাজার সড়কের বদনা ছড়ায় পানির প্রবল চাপে একটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সিলেট নগরীর সাথে সাহেবের বাজারসহ পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ঈদের আগেরদিন থেকে এ পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট নগরে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক। সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীতে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এদিকে বন্যার পানিতে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হওয়ায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, তালতলা, জামতলা, বাগবাড়ির বিভিন্ন সড়কের পানি নামতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন আশ্রিতরা।

অপরদিকে, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় সড়ক যোগাযোগ চালু হয় নি। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যার জন্য উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাথে পলিমাটিকে দায়ী করা হচ্ছে। নদী খননের উপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটর সাদীখাল ব্রিজে বন্যা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, দেশে ৯টি ড্রেজিং স্টেশন করা হচ্ছে, নদীতে চর জাগলে তাৎক্ষণিক অপসারণ করা হবে, এতে যেমন নদী ভাঙন কমবে তেমনি নদী প্লাবিত হবে না। দেশে ড্রেজিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে এমন উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, উজান থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি নেমে এসে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। ছোট ছোট চর জাগলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যাতে তাৎক্ষণিক তা অপসারণ করতে পারে সে জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে তিনি বিমানযোগে সিলেট পৌঁছে সাদীখাল ব্রিজে যান। তিনি বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি নদী খননের উপর জোর দেন।

এদিকে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন-ভিত্তিক ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০২, শেওলা পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছিল।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটের আকাশে মেঘ রয়েছে। যদি তা আসে সাথে বজ্রপাতও থাকতে পারে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের সকলের ছুটি বাতিল করে বন্যার্তদের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বনৗা পরিদর্শন করেছেন। তিনি নদী খননের ওপর জোর দিয়েছেন। আমরাও চাই ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বাড়ানো হোক। তাহলে আর নদী প্লাবিত হবে না।

মৌলভীবাজারে বন্যার পানিতে খেলতে নেমে ২ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু ও এক কিশোর মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো, পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮) ও একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭)।

চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার উদ্দিন জানান, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে শ্যামেরকোনা গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পানিতে খেলতে নেমে সাঁতার না জানার কারণে দুজনই ডুবে যায়। প্রতিবেশীরা এই ঘটনা দেখে দুজনকে পানি থেকে উদ্ধার করে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে।

তিনি আরো জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুমুর্ষ অবস্থায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

সিলেট শহরে পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

সিলেট শহরে রোববার রাত থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি ছিল। এর পর থেকে বৃষ্টি পড়ছে থেমে থেমে। এতে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও সড়ক আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সেপটিক ট্যাঙ্কের ময়লার দুর্গন্ধে শহরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

বুধবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট নগরের উপশহর এলাকায় কিছু লোকের ঘরে কোমরসমান পানি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে চোখে–মুখে আতঙ্ক নিয়ে ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন রহমত আলী ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম।

রহমত আলী বলেন, গত সোমবার রাতে তার ঘরে পানি আসতে শুরু করে। মুহূর্তেই হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। দুই দিনের ব্যবধানে পানি বেড়ে হয়েছে কোমরসমান। পানি বাড়ার আশঙ্কায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

ভারী বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমবার থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে বন্যা হয়েছিল, সেটি ৮ জুনের পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রথম দফার রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দফায় সিলেট নগরসহ সব কটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

আজ সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিলেট নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপশহর, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ এলাকাসহ নিচু এলাকার অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পরিচিতজন কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে যাচ্ছে। অনেকে ঘরে কয়েক স্তরে ইট ফেলে সেখানে খাট তুলে কোনোরকমে আছে।

সকাল নয়টার দিকে মাছুদিঘিরপার এলাকায় তালতলা এলাকামুখী মূল সড়কে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ছিল। সড়কটিতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে একটা লম্বা আকৃতির বাঁশ আড়াআড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোতে মানুষজনের চলাচল ছিল কম। তবে অফিসগামী মানুষেরা পানি মাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। নগরের শামীমাবাদ, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজার, তোপখানা, কাজিরবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, যতরপুর, তেরোরতন ও উপশহর এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। অনেক বাসা, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে আছে।

সকাল ১০টার দিকে নগরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোজভিউ হোটেলের সামনে দিয়ে উপশহরমুখী রাস্তায় ঘোলা পানি থই থই করছে। সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি। জমে থাকা পানিতে ভাসছে বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা। এ পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচল করছে। পানিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল করছে। রাস্তা ও নালা-নর্দমা একাকার হয়ে যাওয়ায় অনেক যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

উপশহর এলাকার বাসিন্দা মনির মিয়া বলেন, তাঁর দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে অনেক পণ্য ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে পড়েছে। তাঁর মতো এলাকার অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের বাসার চুলা-নলকূপ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী সালমা আক্তার (৩৫) বলেন, তার ঘরের ভেতরে হাঁটুসমান পানি। ঘরের চুলা ডুবে গেছে। জরুরি জিনিসপত্র তিনি খাটসহ উঁচু স্থানে রাখছেন। তবে অনেক জিনিস নষ্টও হয়েছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দৈনন্দিন কাজকর্মও করা যাচ্ছে না। পানি আরেকটু বাড়লে বাসা ছাড়তে হবে।

বন্যাকবলিত এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় প্লাবিত এলাকাগুলোয় কয়েক শ দোকান বন্ধ আছে। দোকানের মালামাল নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।

ভুক্তভোগী নগরবাসীর কয়েকজন জানিয়েছেন, অনেক বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে। মানুষের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। এ ছাড়া পানিবন্দী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রসূতি ও নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। যেসব এলাকার রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, সেসব এলাকায় রিকশাচালকেরা যাত্রী পরিবহনে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। এ ছাড়া বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডের অন্তত ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। এ ছাড়া বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় সিটি কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে।

বজ্রপাতে মারা গেল ৪ গরু

মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের ঘাঘরাবাড়ী গ্রামের দক্ষিণ মাহমুদপুর মাঠে বজ্রপাতে দুই কৃষকের ৪টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার প্রবল বর্ষণের সময় মাঠে চড়ানো অবস্থায় বজ্রপাতে গরুগুলো মারা যায়। এ ঘটনায় ঘাঘরাবাড়ি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার দুটি ও রুক্কু মিয়ার দুটি গরু মারা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাচ্চু মিয়া ও রুক্কু মিয়া জানান, আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত নাই।

বুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বজ্রপাতে গরু মারা যাওয়ার কথা শুনেছি।

সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি, বাড়লো পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২১টি ওয়ার্ডের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য এটি।

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট।

ঈদের দিন (১৭ জুন- সোমবার) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। আজ বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) মধ্যরাতে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী।

জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশিদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে।

এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটজুড়ে ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মহানগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

অপরদিকে, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৫৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েক দিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দী লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী ৩ দিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।