Beanibazarview24.com
আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ম হলেন বাংলাদেশের মাসুদ
আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে ১৭ নভেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৮ তে গ্র্যান্ড মাস্টার্স (৫০+) ক্যাটাগোরিতে পঞ্চম হয়েছেন বাংলাদেশের বডিবিল্ডার মাহছুদুর রহমান মাসুদ। এই বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জান লিপসন। এবারের এই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে বিভিন্ন দেশের ২৬৮ জন বডিবিল্ডার অংশ নিয়েছেন।
এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ১৫ নভেম্বর আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস পৌঁছান বাংলাদেশের মাসুদ। স্থানীয় সময় শনিবার তিনি লড়েন গ্র্যান্ড মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে। তার টার্গেট ছিল শীর্ষ ছয়ে আসা এবং তিনি সেটা করতে পেরেছেন। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় এটা তার সেরা সাফল্য।
পঞ্চম হয়ে মাসুদ বলেন, ‘ভালো লাগছে। এতো বড় একটি প্রতিযোগিতায় আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে পঞ্চম হয়েছি। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় এটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য। এই প্রতিযোগিতায় কেবল ন্যাচারালি যারা শরীরগঠন করেছেন (কোনো মেডিসিন ছাড়া) তারা অংশ নিয়েছিলেন। আমি পঞ্চম হয়েছি। বাকিরা যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও কোরিয়ার। আমার লক্ষ্য ছিল টপ সিক্সের মধ্যে আসা।
আমি সেটা করতে পেরেছি। এর আগে আমি জাপানে মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলাম (২০১৫ সালে)। সবশেষ চলতি বছরের আগস্টে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতেছি।’আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ম হলেন বাংলাদেশের মাসুদ
আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ম হলেন বাংলাদেশের মাসুদ
মাসুদের শুরুটা হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেবার পঞ্চম হয়েছিলেন মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে। ওই বছরই তিনি মিস্টার ঢাকা হন। ২০১১ সালের জাতীয় শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে রানার্স-আপ হন। এক বছর পর ২০১৩ সালে তিনি জাতীয় শরীরগঠন প্রতিযোগিতায় মিস্টার বাংলাদেশ হন। একই বছর অনুষ্ঠিত অষ্টম বাংলাদেশ গেমসে তিনি মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে স্বর্ণপদক জিতেন। এরপর চীন ও শ্রীলঙ্কায় এশিয়ান বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন। হয়েছিলেন সপ্তম ও অষ্টম।
২০১৫ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত এএফবিএফ (এশিয়ান ফেডারেশন অব বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস) বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপের ৪৯তম আসরে অংশ নেন তিনি। যেখানে ২১টি দেশের ২৫০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে মাস্টার্স ক্যাটাগোরিতে ব্রোঞ্জ পদক পান মাসুদ। তখন তার বয়স ছিল ঊনপঞ্চাশ। এরপর ২০১৮ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতেন মাসুদ ৫২ বছর বয়সে। এই বয়সেই তিনি খেলতে গিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে।
৫ ফুট সাড়ে ১০ ইঞ্চি উচ্চতার মাসুদের ওজন ৭৬ কেজি। ফিটনেস ঠিক রাখতে প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা হাঁটেন। নিজেই নিজের সব কাজ করেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন দুই ঘণ্টা করে ঘাম ঝরান জিমে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর খেতে হয় তাকে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় থাকে ১৫টি ডিমের সাদা অংশ, এক কেজি মুরগি, ২৫০ গ্রাম টুনা, কোরাল, রূপচাঁদা, ওটস, শাকসবজি ও ফলমূল।
বডিবিল্ডার মাহছুদুর রহমান মাসুদের বাড়ি জামালপুর জেলার পলাশগড় গ্রামে। পেশায় তিনি একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ও কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট। রহিম আফরোজ গ্রুপের তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকতা। তার বাবা ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে মাসুদ ছয় নম্বর। ছোটবেলায় তার আগ্রহ ছিল মার্শাল আর্টে। স্কুলে পড়াকালিন তিনি বিডিআরের একজন প্রশিক্ষককে পান।
তিনি মাসুদদের সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতেন। তিনি মাসুদের আগ্রহ দেখে যত্ন করে শিখিয়ে দেন মার্শাল আর্ট এবং নানচাকু চালানোর কলাকৌশল। তবে লেখাপড়া ও পারিবারিক নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মার্শাল আর্টের চর্চা বেশি দূর এগোয়নি। এইচএসসি পাস করে চলে আসেন ঢাকায়। মিরপুরের বাঙলা কলেজ থেকে বিকম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে এমবিএ করেন। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফার্ম ‘কেপিএমজি রহমান অ্যান্ড রহমান হক’ থেকে সিএ করেন। পাশাপাশি কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট (আইসিএমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
বডিবিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে গলফও খেলছেন তিনি। স্ত্রী শাহানাজ আক্তার আর দুই মেয়ে সামিহা রহমান এলমা ও নাবিহা রহমান সুহাকে নিয়ে তার সংসার। তার বড় মেয়ে সামিয়া রহমান এলমা মার্শাল আর্টের ব্ল্যাক বেল্ট ও ট্রেইনি শ্যুটার।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.