Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

এক সামাজিক আন্দোলনের নাম সিলেটের সায়েদুল হক সুমন







শত শত যানবাহন আর লাখো মানুষের যাতায়াতের ব্রিজটায় খুঁটি থাকলেও বাতির বন্দোবস্ত নেই। কেউ কেউ দেখলেন, ‘কর্তৃপক্ষ’কে আচ্ছামতো গালমন্দ করে চলে গেলেন। যে সড়ক দিয়ে সাঁই সাঁই করে তুমুল গতিতে ছুটে চলে যানবাহন, সেই সড়কের ওপরই বিপজ্জনকভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা বৈদ্যুতিক খুঁটি, যেটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় জড়াতে পারে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো। কেউ কেউ দেখলেন, কেউ কেউ ‘কর্তৃপক্ষের’ নজরে আনারও হয়তো চেষ্টা করলেন, কিন্তু বিপদকে সামনে রেখেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলো সেই খুঁটিটি। মহাসড়কের এক পাশে দিনের পর দিন গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন হলেও কেউ কিছু বলছিলেন না ‘কী হবে?’ ভেবে। রাস্তার মোড়ে বালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ফেলে ফুটপাত দখল করে ফেলা হলেও দোষীদের জাত-পাত ধুয়ে দিয়েই ‘চুপ মেরে’ যাচ্ছিলেন সবাই।



কিন্তু এভাবে কি চলতে পারে? ‘কর্তৃপক্ষ’কে গালমন্দ করে, ‘কী হবে’ ভেবে এড়িয়ে গেলে কি এমন অজস্র অনিয়ম থেকে নিস্তার মিলবে? মিলবে না! সেজন্য কী করতে হবে? অনিয়ম যেন বন্ধ হয় বা সমস্যার যেন সমাধান হয়, সেইভাবে ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ফেসবুক খুললেই এখন সেই পন্থা নজরে পড়ে ব্যবহারকারীদের।

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী রীতিমত সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন। যেখানেই অনিয়ম, সেখানেই ফেসবুক খুলে লাইভে আওয়াজ তুলছেন তিনি। শত শত ব্যবহারকারী সেই ফেসবুক লাইভ শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আর হাজার হাজার ভিউ’র সেই ভিডিও নজরে নিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনের প্রথমে যে ক’টি অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই অনিয়মগুলো দিনের পর দিন চলতে থাকলেও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের এমন ‘ফেসবুক লাইভ আন্দোলন’র ফলে অবিলম্বে সমাধান দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।



হবিগঞ্জের সায়েদুল হক সুমন ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চলে যান। সেখানে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার অ্যাট ল’ করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। আইনজীবী হলেও সুমন পরিচিতমুখ হয়ে উঠেছেন অনিয়মের বিরুদ্ধে তার ‘ফেসবুক লাইভ আন্দোলন’র মাধ্যমে।



কী করেছেন তিনি?
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় সুমন এক রাতে দেখেন নরসিংদীর শিবপুরে রাস্তার প্রায় মধ্যখানে দাঁড়িয়ে লয়েছে পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটি। স্থানীয়দের ভাষ্যে, এই খুঁটির কারণে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছিল না কর্তৃপক্ষের। সুমন এই খুঁটি দেখেই তার ‘ফেসবুক লাইভ’ শুরু করেন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেটি অপসারণ হয়। তবে সুমন ওখানেই ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি সড়কে এ ধরনের খুঁটি সরাতে আদালতের দ্বারস্থ হন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের নির্দেশও জারি করেছেন।



এই ঘটনার আগে পুরান ঢাকার (কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীর প্রবেশপথ) বাবুবাজার ব্রিজ (বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু) দিয়ে যাওয়ার সময় সুমন দেখেন, লাখ লাখ লোকের চলাচলের এতো গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির ওপর বাতি প্রায় ছিলই না, যেজন্য অন্ধকারেই চলাচল করতে হতো যানবাহন এবং লোকজনকে। তাতে অনেক ছিনতাইয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটতে বলে ভাষ্য স্থানীয়দের। সুমন বিষয়টি ফেসবুক লাইভে তুলে ধরলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাতি বাতিতে জ্বলে ওঠে এই ব্রিজ।



রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে বালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে ফুটপাত দখল করে রেখেছিল একটি মহল। এতে জনচলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত হচ্ছিল। সুমন সেটি তার ফেসবুক লাইভে প্রচার করলে দ্রুতই অপসারণ করা হয়। পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানির দোকানের সামনেই ছিল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সুমনের ফেসবুক লাইভের পর অপসারণ হয় সেসবও।

মহাসড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, ফুটপাত দখলসহ এমন আরও অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে আওয়াজ তুলে সমাধান এনেছেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি এসব লাইভে বারবারই বলে চলেছেন, সবাইকেই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, দেশকে গড়তে হলে সবারই সদিচ্ছা লাগবে।

‘ফেসবুক লাইভ আন্দোলন’র বাইরে সুমন নিজ অর্থ-শ্রম দিয়েও করে চলেছেন অনেক কাজ। তার এলাকা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চা বাগানের বিভিন্ন ছড়া-খালের ওপর বানিয়েছেন ২১টি সেতু। নির্মাণ করেছেন অন্তত ৪০টি রাস্তা। এতে যেমন হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে, অজস্র মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার ইতিবাচক মানসিকতা।

কী ভাবছেন তিনি
অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘ফেসবুক লাইভ’ আন্দোলন নিয়ে বাংলানিউজকে সায়েদুল হক সুমন বলেন, প্রযুক্তির এমন সদ্ব্যবহারের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিলো না। শিক্ষাজীবন থেকেই আমি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত। কাজ করতে করতেই দেশে আধুনিক প্রযুক্তির প্রচলন ঘটে। মনে হচ্ছিলো ছোট একটা ভালো কাজ করে যদি প্রচার করা যায়, তাহলে আরও হাজারটা ভালো কাজ হবে। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে ফেসবুক লাইভে কথা বলার সাহস পাই। ভালো সাড়াও আসে সব জায়গা থেকে।

‘এলাকায় কাঠের ব্রিজ, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছি। শুরুতে লোকজন হাজারো নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছে। অনেক গালাগালও করেছে। কেউ কেউ বলেছে- এমপি হওয়ার জন্য নাকি আমি এসব করছি। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল অমাকে ভালো কাজ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া। তবে আমি আমার কাজ থেকে এতোটুকুও পিছপা হইনি।’

বিগত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশায় মাঠে নামলেও শেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিনকে দেখে তাকে নিজের চেয়ে যোগ্য উল্লেখ করে সরে দাঁড়ান সুমন। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনেও আমার লড়াইয়ের চিন্তা রয়েছে। তবে তখনো যদি আমার চেয়ে যোগ্য কেউ এই আসনে নির্বাচন করতে আসেন, নির্দ্বিধায় তাকে ছেড়ে দেবো।

নিজের সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড ফেসবুকে প্রচার নিয়ে এক-আধটা কটূ কথাও শুনতে হয় সায়েদুল হক সুমনকে। তিনি বলেন, এই লাইভগুলো ফলোয়ার সংযুক্ত করার উদ্দেশে নয়। আমি সমাজ এবং দেশের জন্য অনেক বেশি কিছু করে ফেলেছি তা-ও কিন্তু নয়। তবে একেকটা কাজ করার মধ্য দিয়ে আমি একেকটা মেসেজ ছড়িয়ে দিতে চাই- আমার ছোট একটা কাজে কিছু আসে যায় না। একজনের পক্ষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আমি অনেক সময় নিজ হাতে এলাকার রাস্তার ময়লা পরিচ্ছন্ন করে বোঝাতে চাই- নিজের জন্মস্থানের জন্য কেউ ভিআইপি নন। এই মেসেজটা পেয়ে আমার মতো যদি হাজার হাজার মানুষ কাজ করেন, তাহলে সমস্যা বলে কোনো কিছু দেশে থাকবে না। জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

কী করতে চান তিনি
লন্ডনে বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করার পর অনেকেই সুমনকে সেখানেই থেকে যেতে বলেন। কিন্তু দেশের জন্য এক অভাবনীয় অনুভূতির টানে তিনি ফিরে আসেন। তার মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে তার যে প্রেম হয়েছিল, সেটি কেন যেন হচ্ছে না ব্রিটেনের সঙ্গে। হয়তো এমন আরও অনেকেরই হয় না। সুমনের মনে হতো, লন্ডনে অনেক ব্যারিস্টার আছেন সেখানে কাজ করার জন্য। কিন্তু তার মাতৃভূমিতে যদি আরেকজন ব্যারিস্টার ফিরে ন্যূনতম হলেও কিছু করতে পারেন, তাতে দেশ উপকৃত হবে। সুমন মনে করেন, বার অ্যাট ল’ করা পর্যন্ত তিনি দেশ-জাতি-সমাজ থেকে নিয়েছেন। এরপর বিশেষ করে ৪০ বছরের পর দেশ-জাতিকে তার দেওয়ার পালা। সেই দৃষ্টিভঙ্গিই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। মানুষ হয়তো হবে ‘মহত্তম সম্পদ’, নতুবা ‘বৃহত্তম দায়’।

সুমন চাইছেন, তিনি তার জায়গা থেকে যেভাবে সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাজ করছেন, তারুণ্যও একইভাবে কাজ করুক। সমাজের সব অসঙ্গতি ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে তুলে ধরুক কর্তৃপক্ষের সামনে। দেশের জন্য এই সামাজিক আন্দোলনটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাক। নতুন প্রজন্ম যদি একতাবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির জন্য কাজ শুরু করে, তাহলে হতাশার কোনো জায়গা থাকবে না।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.